চরের শেষপ্রান্তে যেখানে ভাঙছে ছোট ফেনী-সেই এলাকা ও তৎসংলগ্ন কেওড়া বন টার্গেট করে আমরা বরাবর দক্ষিণে হাঁটতে থাকি। ছোট ছোট পানিবিহীন-কিন্তু নরম কর্দমাক্ত বেশ কয়েকটি খাল পেরিয়ে কেওড়া বনের কাছাকাছি উঁচু বিশাল সমতলভূমির দেখা মেলে। গোটা চরে তেমন কোন জনমানব নেই। চারপাশে যতদুর চোখ যায়-খোলা মাঠ, মাঝে মাঝে ছোট-বড় গাছ, প্রায় পুরোটাই জনমানবহীন। কিন্তু ওই একলা চরে কেওড়া বনের পশ্চিমে হঠাৎ দেখা মেলে জাফর আলমের। বেশ একটা সংসার পেতেছে জাফর আলম। তখন দুপুর দেড়টা।
কথা বলে জানা গেল-ওদের বাড়ি কক্সবাজারের নুন্নাছরা এলাকায়। তার বয়স ১৫ বছর। পিতা-মাতা বাড়িতেই থাকেন। পিতার নামটি সে বললেও বোঝা গেলনা। ওরা চারজন এখানে থাকে। রতভর কাঁকড়া আহরণ করে ফেনী নদীতে। দলের বাকি সদস্যদের মধ্যে শুধু সোনামিয়ার নামটি বলতে পেরেছে সে-বাকিদের নাম মনে নেই। বাকি সদস্যরা কাঁকড়া ধরতে গেছে। কখন ফিরবে ঠিক নেই। রাতে কাঁকড়া ধরে দুপুরে ঘুমায় সে। নদী থেকে আহরণ করা কাঁকড়া বিক্রি করে বিভিন্ন বাজারে।
খুব সুন্দর করে সংসার পেতেছে জাফর আলম। কালো পলিথিনের তাঁবু। ভেতরে তেলের বোতল, মসলার পাত্র, চালের পাত্র, পানির পাত্র, সুপেয় পানির জগ, গ্লাস, ভাত-তরকারী রান্নার পাতিল, গরম কাপড়, কাঁথা, পুরনো কম্বল, বাইরে ২০ লিটারের পানির কন্টেইনার, চুলা, ছোট ছোট গাছের টুকরো-যা জ্বালানী হিসেবে ব্যাবহার করা হয়, বদনা, কাঁকড়া ধরার কয়েকটি চাই, সব্জি, কাঁচা মরিচসহ অনেক কিছুই রয়েছে। একটি সংসারে যা কিছু প্রয়োজন-তার প্রায় সবকিছুই রয়েছে ওখানে। অনেক দুর থেকে সুপেয় পানি এনে পান করে ওরা। জাফর নিজেই খাবার রান্না করে। সে জানাল, এখানে মাত্র দুদিন আগে এসেছে ওরা, থাকবে মাসখানেক। এরপর চলে যাবে অন্য কোথাও।
আমাদের আরো এক কিলো সামনে এগিয়ে ছোট ফেনীর পাড়ে ভাঙন এলাকায় যাবার তাড়া ছিল। তাই বেশি কথা না বাড়িয়ে সামনে পা বাড়াতে হল। শুধু যেতে যেতে ভাবছিলাম-এই জনমানবহীন একলা চরে কিভাবে থাকে জাফর আলম ? কিভাবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দূর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করে? আল্লাহ জাফর আলমদের সহায় হোন।
লেখক : ফেনী প্রতিনিধি, দৈনিক কালের কন্ঠ। ফেসবুক ওয়াল থেকে