আজ

  • বৃহস্পতিবার
  • ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিছনাকান্দিতে ‘লুকিয়ে থাকা’ নৈসর্গিক সৌন্দর্য

  • সিদরাতুল সাফায়াত ড্যানিয়েল
  • ‌’দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ’ হিসেবে খ্যাত আধ্যাত্মিক রাজধানী ‘সিলেট’ সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ নিদর্শন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময়তায় বিমোহিত হয়ে মাঝেমাঝে মনে হয় সৌন্দর্যের সমর্থক শব্দ সিলেট! তাইতো, দেশের নানা স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসে সিলেটের প্রকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য।

    কয়েকদিন আগে বন্ধুরা মিলে ভাবলাম দূরে কোথাও না গিয়ে সিলেটের মধ্যে কোনো এক জায়গায় বেড়াতে যাবো। সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিক করলাম ‘বিছনাকান্দি’। যেই ভাবা সেই কাজ। ভ্রমণের দিন সবাই একত্রিত হলাম। শীত সকালে এক কাপ কড়া লিকারের চা খেয়ে নিলাম এর মধ্যে। তৎক্ষণাত ঘুম ঘুম শরীরের অলসতা কাটিয়ে একরকম ফুরফুরে ভাব তৈরি হলো! সকাল আটটায় যাত্রা শুরু করি সিলেট শহর থেকে।

    1.বিছনাকান্দিতে ‘লুকিয়ে থাকা’ নৈসর্গিক সৌন্দর্য

    ‘বিছনাকান্দি’ সিলেট জেলার গোয়াইঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে বিছানাকান্দি। জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এই বিছনাকান্দির যাত্রা শুরু হয়। তবে ছোট বড় পাথর, পাহাড়, পানি ও মনোরম দৃশ্য ভ্রমণ পিয়াসুদের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে। পাথরপূর্ণ নদী, নদীর দুই পাশে পাথরের স্তূপ, মাঝখানে পাথরগুলোর বুক ছুঁয়ে শীতল পানির বয়ে চলা আর সম্মুখে উঁচু পাহাড়ের মনহরণকারী সুন্দরের সমাহার। এসব কিছু মিলে প্রকৃতি যেন এক জলপাথরের স্বর্গ রচনা করেছে এখানে। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের মাঝে কিছুটা সময় কাটাতে পারলে আপনার কেমন লাগবে একটু ভেবে দেখুন তো!

    যাত্রা শুরুর দুই ঘণ্টা পর আমরা উপরগ্রাম হাদারপার বাজারে এসে পৌঁছলাম। গান আর আড্ডায় কখন যে এসে পৌঁছেছি সেই লক্ষণটা সবার চোখেমুখে দেখা গেলো। সেখান থেকে বিছনাকান্দির মূল স্পটে গাড়ি নিয়ে যাবার কোনো ব্যবস্থা নেই, তবে নৌকা নিয়ে যাওয়া গেলেও আমরা সবাই হেঁটেই রওনা দিলাম। রাস্তার দুই পাশের ধানক্ষেত, তার উপর দিয়ে অজানা অচেনা কতো পাখির উড়াউড়ি। চোখটা ফেরাতেই ইচ্ছে করছিলো না। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর গল্পবাজি, সেলফি আর খুনসুটি করতে করতে কখন যে সেই নয়নাভিরাম স্থানে এসে পড়েছি তা টের-ই পেলাম না!

    2.বিছনাকান্দিতে ‘লুকিয়ে থাকা’ নৈসর্গিক সৌন্দর্য

    দীর্ঘ যাত্রা ও কিছুটা হাঁটার ফলে আমাদের সবার ক্লান্তি-বোধ হলেও বিছনাকান্দির রূপে মুগ্ধ হয়ে ভুলে যাই পথের সব ক্লান্তি। উঁচু উঁচু ৭টি পাহাড় আর অগণিত পাথর দেখে খানিকক্ষণ চিন্তা করে ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তার চেয়ে অবাক হলাম, পাহাড়ের পাশ দিয়ে ঘেঁষে আসা ধবধবে সাদা জলরাশি দেখে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের লীলা ও মনোরম দৃশ্য দেখে হৃদয়ে বারবার গেয়ে উঠতে থাকে, পাগল হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে, চেনাশোনার কোন বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে, সেখানে অকারণে যায় ছুটে।

    আর সময়ক্ষেপণ না করে সবাই কাপড় পাল্টে নিয়ে একে একে ঝাঁপ দিলাম পানিতে। সাথে থাকা ভলিবল ছুড়তে ছুড়তে সবাই পানির খেলায় মেতে উঠি। কিছু সময়ের জন্যে হলেও ফিরে যাই শৈশবের দুরন্তপনায়। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও কারো পানি থেকে উঠবার কোনো চিন্তা-ই নেই!

    গোসল করে নিয়ে পাশের দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠে গাছের ছায়ায় বসে সাথে করে নিয়ে যাওয়া খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর ধীরেধীরে আমাদের গাড়ি ছুটে চললো ইটপাথরে গড়ে ওঠা শহরের দিকে। চারপাশের প্রাকৃতিক সব দৃশ্য অবলোকন করতে করতে আমরা চলে আসি আমাদের আবাসস্থলে। ঠিকই চলে এসেছি বটে, কিন্তু আমাদের মন পড়ে থাকলো বিছনাকান্দির নয়নাভিরাম রূপলগ্নে। কী অদ্ভুত প্রকৃতি আমার দেশের।

    3.বিছনাকান্দিতে ‘লুকিয়ে থাকা’ নৈসর্গিক সৌন্দর্য

    জেনে নেয়া ভালো

    বিছনাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। বিমানবন্দর রোডের সিএনজি স্টেশন থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপার পর্যন্ত গেলে ভালো যেতে হবে। ৫জন মিলে ১,০০০টাকায় সাধারণত ভাড়া নেয়া হয়। তবে মানুষ কম থাকলে ৮০ থেকে ২০০ টাকা জনপ্রতি যাওয়া যায়। বিছনাকান্দি ও তার আশপাশের এলাকায় থাকার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে।

    সম্পাদনা : এএএম/এনকে


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090