শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথী উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য জন্মাষ্টমী উৎসব ফেনীতে বুধবার সমাবেশ ও মঙ্গল শোভযাত্রার মধ্য দিয়ে উদযাপন হয়েছে। বিকালে শহরের জয়কালী মন্দির সম্মুখস্ত ট্রাংক রোডে ফিতা কেটে শোভযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। এর আগে মন্দির প্রাঙ্গণে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন তিনি।
পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন, পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জিপি প্রিয়রঞ্জন দত্ত, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি শুকদেব নাথ তপন, সাধারণ সম্পাদক লিটন সাহা, জয়কালী মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার দাস।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনিল নাথের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সহ-সভাপতি মাষ্টার হিরা লাল চক্রবর্তী, সাবেক সাবেক সভাপতি রাজিব খগেশ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সমির চন্দ্র কর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ও বিপুল সংখ্যক ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের ট্রাংক রোড সহ প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় জেলার সর্বস্তরের সনাতন ধর্মালাম্বীরা অংশ নেন। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু ধর্মালম্বীদের সরব অংশগ্রহণ ছিল শোভাযাত্রায়। ঢোল-করতাল আর আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের তালে-তালে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের প্রতিকৃতি, রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি, শ্রীকৃষ্ণের জন্ম মুহূর্তসহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে অংশ নেন কৃষ্ণ ভক্তরা। বিভিন্ন মঠ-মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ফেস্টুন-ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেছেন, “উৎসব সবার, ধর্ম যার যার। যে যার ধর্ম পালন করি, উৎসবে সবাই একত্রিত হই। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে ফেনীতে সবাই একত্রিত হওয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তারই প্রমাণ। ১৫৫৫ সাল থেকে জন্মাষ্টমীর মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। ১৫৬৫ সালে ঢাকায় বৃহৎ আয়োজনে পালন হয়। বৃটিশ আমল থেকে মুসলমান ও হিন্দুদের উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা হয়। দেশভাগের পর কিছু ছন্দপতন হয়। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পাই। সেই বাংলাদেশে আগের মতো জাকজমকপূর্ণভাবে মঙ্গল শোভযাত্রা শুরু হয়।”
তিনি আরো বলেন, “শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দার্শনিক, রাজনীতিবিদ। ভারতবর্ষে সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে রাজাদের মধ্যে অস্থিরতা ছিল তখন শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা এসেছেন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই সবার জন্য-মানুষ মানুষের জন্য কাজ করবো। সম্প্রীতি বজায় রাখবো, সুশৃঙ্খল থাকবো। পূজা, অর্চনা, দেবী বিসর্জন সহ সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা থাকবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানে স্বাধীনতার পর থেকে সরকারিভাবে জন্মাষ্টমী আয়োজন হয়। দেশকে এগিয়ে নিতে ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তারই কন্যা শেখ হাসিনা অক্লান্ত কাজ করছেন। আমরা তার পাশে আছি থাকবো।”
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি