ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদী থেকে উদ্ধার হওয়া চিত্রা হরিণটিকে মঙ্গলবার রাতে জেলা সদরের কাজীরবাগ ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়েছে। আজ বুধবার উপজেলা সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক এ তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল সকালে উপজেলার চরখোন্দকার এলাকার জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে যান। দুপুরের দিকে হঠাৎ তাঁরা একটি হরিণকে নদীতে ভাসতে দেখেন। এ সময় তাঁরা হরিণটিকে উদ্ধার করে লোকালয়ে নিয়ে এসে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হুসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হরিণটিকে থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় হরিণটিকে একনজর দেখতে শত শত উৎসুক জনতা নদীর পাড়ে ভিড় জমায়।
হরিণ উদ্ধারকারী দলের সদস্য জেলে ইকরামুল হক বলেন, মাছ ধরার সময় নদীতে ভাসতে দেখে তাঁরা দুজন হরিণটিকে উদ্ধার করেছেন। তাঁরা উদ্ধার না করলে নদীতে সাঁতার কেটে শক্তি হারিয়ে হরিণটি মারা যেত।
সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হুসেন জানান, স্থানীয় লোকজন হরিণটিকে নদী থেকে উদ্ধার করে চরখোন্দকার এলাকায় নিয়ে আসে। তিনি পুলিশ নিয়ে ওই এলাকায় গিয়ে হরিণটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। হরিণটি ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। এটির উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট। ওজন প্রায় ৫০ কেজি।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম বলেন, বড় ফেনী নদী থেকে উদ্ধার করা চিত্রা হরিণটিকে সন্ধ্যায় উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁরা হরিণটিকে জেলার কাজীবাগ ইকোপার্কে অবমুক্ত করেছেন।
সাজেদুল ইসলাম আরও বলেন, গত বেশ কয়েক বছর ধরে মুহুরী প্রকল্প এলাকাসহ উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ বানর, হরিণ, ইগল, মেছোবাঘসহ বন্য প্রাণীর আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এসব প্রাণী দিনে হঠাৎ দেখা গেলেও রাতের বেলায় আর দেখা যায় না। গত দুই বছরে পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বেশ কয়েকটি হরিণ, বানর, ইগল ও মেছবাঘ উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।
উপজেলা সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, উদ্ধার হওয়া চিত্রা হরিণটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই ফেনী সদর উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলার কাজীরবাগ ইকোপার্কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য উপকূলীয় এলাকায় সামাজিক বনায়ন উজাড় না করে বৃদ্ধি করা দরকার। মিরসরাই ও সোনাগাজীর অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলার কারণে চরাঞ্চল এলাকায় কেওড়াবনসহ কয়েকটি জঙ্গলের গাছ কেটে ফেলায় আশ্রয়ের জন্য দিশেহারা হয়ে হরিণটি ওই সব বন থেকে লোকালয়ে চলে আসতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন। এর আগে আরও কয়েকটি বন্য প্রাণী চরাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি