আজ

  • শুক্রবার
  • ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে বিএডিসির ভেজাল বীজে বিপাকে হাজারো কৃষক

  • বিশেষ প্রতিবেদক
  • ফেনীতে ভেজাল ধানের বীজের বিপাকে পড়েছে হাজারো কৃষক। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে কেনা চলতি আমন আমন মৌসমে ব্রি ৫১ জাতের ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পুরো জেলার কয়েক হাজার কৃষক।

    কৃষকদের অভিযোগ, বিএডিসির সরবরাহ করা ধানের বীজে বিভিন্ন ধানের মিশ্রণসসহ নিম্নজাতের হওয়ায় কোনোটা পেকে গেছে আবার কোনোটার শীষ বের হয়ে গেছে রোপনের ১৫ দিনের মাথাতেই।

    ফলে এই মৌসুমে জমিতে আর্থিক ও শারীরিকভাবে শ্রম ঘাম দিয়েও ফসল যাচ্ছে না তোলা। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েদিশেহারা হয়ে পড়লেও কৃষকদেতর ক্ষতির দায়বার নিতে চাচ্ছে না কৃষি সংশ্লিষ্ট কোন বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন প্রান্তিক কৃষকের সাথে তারা জানান তাদের ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা।

    ফেনীর দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহীগুণী এলাকার মাসুদুল হক চিশতী তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরীর চিন্তা বাদ দিয়ে নেমে পড়েন কৃষি কাজে। চলতি মৌসুমে তিনি ২০ একর জমিতে ধান চাষ করেছেন।

    কিন্তু বিএডিসি’র বিআর-১১ ও ব্রি ৫১ জাতের বীজ কিনে তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিএডসি থেকে বলা হয় এ জাতের ধান উচ্চ ফলনশীল। এ জাতের ধান গাছের জীবনকাল ১৪৫ দিনের মত। কিন্তু রোপনের মাত্র ১৫ দিনের মাথাতেই চলে শীষ চলে আসে। অপরিপক্ষ এসব শীষে ধান নেই আছে ভূসি।

    তার মতো জেলার ৬ উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে দু শতাধিক একর জমিতে ধান চাষ করে হাজারো কৃষক। কৃষকেদের অভিযোগ, বীজে রয়েছে বিভিন্ন ধানের মিশ্রণ। পাশাপাশি বস্তায় বিএডিসির সীল থাকলেও আসলে বাস্তবে মিলছে ভিন্ন। এতে স্বল্প সময়ে কোনটা পেকে নষ্ট হচ্ছে আবার কোনটার শীষ বের হয়ে গেছে। ফলে ব্যাপক ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়ছে ফসল নির্ভর চাষিরা।

    বাদশা মিয়া নামের বারাহীগুনী এলাকার আরেক কৃষক বলেন, তিনি ১’শ ২০ শতক জমিতে ব্রি আর-২২ জাতের ধান চাষ করেছেন। বীজ কিনেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে। তিনি বলেন এক প্যাকেট ৩’শ ১০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। কতৃপক্ষ বলেছে উন্নত জাতের রোপন করার পর দেখা যায় নিম্ন মানের এবং মিশ্র জাতের ধান।

    একই ধরনের অভিযোগ কৃষক আবদুর রহমি, দেলোয়ার হোসেন ও আবুল বাশার সহ বেশ কয়েকজনন কৃষকের।

    ফেনী মহিপালস্থ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসির) কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ব্রি ৫১ জাতের ১৮ টন বীজ বিক্রি হয়। যা দিয়ে চাষ করা হয় ১৮০ একর জমি। মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা জানান, এ ১’শ ৮০ একর জমিতেই ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভেজাল বীজের কারণে এ বিশাল পরিমাণ জমিতে চাষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষকরা।

    মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা জানান, সরকারী বিএডিসি’র থেকে বীজ কিনতে রশিদ চাইলেও দিচ্ছে না তারা। আর বিএডিসি বলছে বিক্রয় সময় অবশ্যই দিচ্ছে রশিদ। রশিদ বিহীন কনো অভিযোগ গ্রহনযোগ্য নয়। তবু বিষয়টি এখন দেখার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

    এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসির) সহকারী পরিচালক (বীজ বিপনন) প্রনব আনন্দ ভৈামিকের সাথে। তিনি জানান, বীজগুলো আমাদের ল্যাবে প্রত্যায়িত হয়ে যায়। ৮০ শতাংশ বীজ গজালেই তা কৃষক পর্যায়ে যায়। এর চেয়ে কম গজালে সে বীজ বিক্রি হয় না। কৃষক পর্যায়ে বিক্রির পর ৮০ শতাংশ না গজালে আমরা মাঠ পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

    এছাড়া অন্য সমস্যা হলে তা দেখবে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। বীজ বিক্রির পর মেমো প্রদানের ব্যাপারে তিনি বলেন, মেমো ছাড়া কোন ধরনের অভিযোগ গ্রহণ করা হবেনা। বিএডিসি মেমো ছাড়া কোন ধরণের বীজ বিক্রি করে না।

    এদিকে কৃষি বিভাগ জানায়, ভেজাল ও মিশ্রণ বীজের কারণে প্রায় শতাধিক একর জমির ধানে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার ব্যাপারে উদ্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

    মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনকালে কথা হয় দাগনভূঞাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. হারুন অর রশিদের সাথে। তিনি বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে এসে কৃষকের এসব ধানের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়েছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে এবং উচ্চ পর্যায়ে নজরে আনা হবে।

    কৃষকদের জীবন জীবিকার কথা ভেবে,ক্ষতি পুষিয়ে দেয়াসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী স্থানীয়দের।

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090