মোবাইল এখন আমাদের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। মোবাইলবিহীন চলাফেরা মানে নিজেকে বিপদে ফেলা। আধুনিকতকার এই সময়ে যুগের সব সুবিধা ভোগ করতে মোবাইল হলো নিত্যনৈমিক্তিক ব্যাপারা। দৈনন্দিক পারিবারিক বাজার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব কাজকর্মে মোবাইল ছাড়া হয়ই না। মোবালই এখন মানুষের এমন অনুষঙ্গ হয়েছে যা বর্ণনা করে শেষ করার মতো না।
মোবাইল যেমন যোগাযোগকে সহজ ও দ্রুততর করেছে, রাস্তা ও যোগাযোগের দূরত্ব কমিয়েছে ঠিক তেমনি মোবাইল আমাদের আনন্দ উৎফুল্ল বাড়িয়েছে। শুধু তাই, মোবাইলের মাধ্যমে এখন মানুষ ওষুধ ব্যবহারের রুটিন বের করে নেয়। ওষুধ সেবনের সময় হলে অটোমেটিক হাসপাতাল থেকে রোগীর মোবাইলে মেসেজ আসে কোন ওষুধ এখন খেতে হবে। শুধু তাই না, গাড়ির সময়, অফিস আদালত স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিসহ সব টাইমিং বিষয়গুলোতে এখন আর খেয়ে না খেয়ে নজর রাখতে হয় না। পকেটের মোবাইলই সব বলে দেয়।
পায়ে হেঁটে সময় খরচ করে বিদ্যুৎ পানি বা গ্যাসের অফিসে যেতে হয় না বিল পরিশোধ করার জন্য। দুইটা বা তিনটা আঙ্গুলের আলতো স্পর্শে খুব সহজেই ঘরে বসে পরিশোধ করা যায় সব ধরণের বিল।
এই সুবিধার ধাক্কা লেগেছে আমাদের ইবাদত ও ধর্মীয় কার্জকারণেও। কোরআন শরিফ বা হাদিস পড়ার জন্য এখন হাতে প্রিন্টের কোরআন বা হাদিসের কিতাব নিতে হয় না। দোয়া শিখার জন্য নতুন করে কিনতে হয় না দোয়া বা মাসআলার বইপত্র। তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে জাগাতে ভিন্ন টেবিল ঘড়ি ঘরে রাখতে হয় না। সেহরি টাইমের জন্য এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিনের মাইকের এলানের অপেক্ষা করতে হয় না। সব করে দেয় আমাদের মোবাইল।
তবে মোবাইল ব্যবহারেও রয়েছেও সতর্কতা ও মাসআলার বিধি বিধান। সুযোগ আছে বলেই যখন তখন মোবাইল যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ব্যবহারেও রয়েছে শরীয়তের সুনির্দিষ্ট বিধান। সেই সুনির্দিষ্ট বিধানগলো আমরা এখন জানবো দলিল প্রমাণসহ। কতগুলো প্রশ্নাকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে জরুরি কতো মোবাইল সম্পর্কিত মাসআলা।
নামাজে মোবাইল রিংটোন
প্রশ্ন : নামাজের আগেই আমি সাধারণত মোবাইল বন্ধ করি। কিন্তু কিছু দিন আগে মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যাই। এমতাবস্থায় নামাজের সময় মোবাইল বেজে ওঠে। এখন জানার বিষয় হলো, এ অবস্থায় নামাজের মধ্যে করণীয় কী?
উত্তর : নামাজের সময় যদি মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে তখন মুসল্লির জন্য করণীয় হলো, এক হাত দ্বারা নির্দিষ্ট বাটন টিপে মোবাইল বন্ধ করে দেয়া। আর যদি পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে বন্ধ করে তাহলে মুসল্লির নামাজ ভেঙ্গে যাবে। উল্লেখ্য, নামাজে প্রবেশের পূর্বে মুসল্লির দায়িত্ব হচ্ছে রিংটোন বন্ধ করে দেয়া। (রদ্দুল মুহতার: খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ৪৬৫)।
ফতহুল কাদির গ্রন্থের আছে, নামাজ ভঙ্গের কারণগুলো হলো আমলে কাসির। আমলে কাসির কি? আমলে কাসির হলো দূর থেকে কোনো ব্যক্তি নামাজে ব্যক্তিকে এমন কাজে লিপ্ত দেখলো, মনে হয় যে সে নামাজে নেই। আর যদি সন্দেহ হয় সে নামাজে কিনা তাহলে আমলে সগির হবে। ( খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৪১৩। অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে ফতওয়ায়ে কাজিখান খণ্ড ৭ পৃষ্ঠা ৮০, খোলাসাতুল ফতওয়া খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৩৯)।
মোবাইল মেমোরিতে পুরো কোরআন শরিফ ডাউনলোড করা অবস্থায় সেই মোবাইল নিয়ে টয়লেটে যাওয়া
প্রশ্ন : আমার মোবাইল মেমোরিতে পুরো কোরআন শরিফ ডাউনলোড করা আছে। আমি বিভিন্ন সময়ে তা বের করে তেলাওয়াত করি। এই মোবাইল নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে কি না?
উত্তর : কোরআন বা আল্লাহ তায়ালার নাম লিখিত কোনো কিছু দৃশ্যমান অবস্থায় টয়লেটে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। তাই কোরআনের আয়াত বা কোনো জিকির মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে হাম্মাম বা টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে না। অবশ্য স্ক্রিনে না থেকে যদি মোবাইল কার্ডে বা মোবাইল মেমোরিতে থাকে অথবা কোনো কভার ইত্যাদি দ্বারা তা ঢেকে নেয়া হয় তবে ওই মোবাইল নিয়ে টয়লেটে যাওযা যাবে। তাতে অসুবিধা নেই। নিচের উপরোক্ত মাসআলার দলিল দেয়া হলো-
শরহে মুনয়াতুল মুসল্লি গ্রন্থের বর্ণনা, বাথরুমে প্রবেশকালে হাতের আংটিতে কোরআন বা আসমানি কিতাবের অংশ থাকা মাকরুহ। আংটি ব্যতিত কোনো বস্তুতে আর তা কোনো কাগজ বা কাপড় দিয়ে মোড়া কোনো সমস্যা নয়, তবে এর থেকে পরহেয থাকাই উত্তম। মুনয়াতুল মুসল্লি ৬০ পৃষ্ঠা। বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ফতহুল কাদিরে রয়েছে, গিলাফ জাতীয় কোকো কিছু দ্বারা পেঁচানো হয় অসুবিধা নেই। তবে এর থেকেও বেঁচে থাকা উত্তম। খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৫০।
ফিকহে ফানাফির প্রসিদ্ধ আইনের কিতাব রদ্দুল মুহতারে রয়েছে, তাবিজ জাতীয় কোনো কিছুতে যদি গিলাফ মোড়া থাকে আর সেই তাবিজের ভেতর কোরআন থাকে মাকরুহ হবে না। তবে এর থেকে বেঁচে থাকাও উত্তম। খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৭৪।
ফিকহে ফানাফির অন্য আরেকটি প্রসিদ্ধ কিতাবে রয়েছে, তাবিজের মধ্যে যদি কোরআনের আয়াত থাকে বা আবৃত থাকে তা নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করাতে মাকরুহ হবে না তবে তা থেকে বিরত থাকা উত্তম। দুররে মুখতার খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৭৮।
স্ক্রিনটাচ মোবাইলে ওজু ছাড়া কোরআরে আয়াত স্পর্শ করা
প্রশ্ন : স্ক্রিনটাচ মোবাইলে ওজু ছাড়া কোরআনের আয়াত স্পর্শ করলে গোনাহ হবে কিনা এবং মোবাইলে কোরআন দেখে পড়লে দেখে পড়ার সওয়াব হবে কিনা? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : স্ক্রিন টাচ মোবাইলের স্ক্রিনে কোরআনের আয়াত দৃশ্যমান থাকলে তা খালি হাতে স্পর্শ না করাই ভালো। এক্ষেত্রে রোমাল বা এ জাতীয় পরিষ্কার কিছু দিয়ে স্পর্শ করলে দূষণীয় হবে না। আর মোবাইলের স্ক্রিনে কোরআন দেখে পড়লে কোরআন দেখে পড়ার সওয়াব পাওযা যাবে ইনশাআল্লাহ!
ফেনী ট্রিবিউন/আরএজে/এএএম