ফেসবুক খুললেই গরুর ছবি। সঙ্গে গরু বিক্রির বিজ্ঞাপনও দেখা যাচ্ছে। এরপরও করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির গরুর দাম ও চাহিদা কমা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ফেনীর খামারিরা। এ বছর কোরবানি উপলক্ষে গরু ও খামারের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে সে তুলনায় বাড়েনি গরুর চাহিদা। জেলায় কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য অনলাইনে পশুর হাট নামে বেশ কয়েকটি আইডি খোলা হলেও তেমন সাড়া নেই বলে জানান খামারি ও সংশ্লিষ্টরা।
খামারিরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় এবং করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাটে ক্রেতা কম দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় গরুর দাম ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন খামারিরা। কোরবানির হাটে পশুর দাম কম হওয়ায় খামারিদের সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। জেলায় ৪ হাজার ২শ ৩৯টি খামারে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কমেছে পশুর সংখ্যা।
জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন গ্রামে কোরবানি উপলক্ষে গরু পালন করে থাকেন খামারিরা। ভারতসহ পাশ্ববর্তী দেশ থেকে গরু আনা বন্ধ থাকায় এবার গরু পালন ও মোটাতাজা কারণে ঝুঁকছেন নতুন নতুন খামারি।
কার্যালয়ের দেয়া তথ্যমতে, গত বছর জেলায় খামারে কোরবানির জন্য ৮৫ হাজার পশু পালন করা হয়। সেখানে এ বছর খামার সংখ্যার পাশাপাশি পশুর সংখ্যা কমেছে। ৪ হাজার ২শ ৩৯টি খামারে ৭২ হাজার ৪শ ৪৫টি পশু কোরবানি উপলক্ষে পালন করা হয়েছে।
এদিকে করোনা সংকটের কারণে গো-খাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। এতে আরও বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। খামারিরা বলেন, করোনা সংকটের আগে এক বস্তা গমের ভূসির দাম ছিল ১২০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০-১৬০০ টাকায়। শুধু গমের ভুসি নয় খইলসহ সব ধরনের গো খাদ্যের দাম ২৫-৩০ শতাংশ বেড়েছে।
জেলার ৬ উপজেলার ৫ পৌরসভা, ৪৮টি ইউনিয়নে বিপুল সংখ্যক কোরবানির পশু জন্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া পালন করা হয়ে থাকে। এসব পশু বিক্রির আয়ের টাকা দিয়ে খামারিদের সারা বছর সংসার চলে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবারের কোরবানির ঈদের বাজার তেমন ভালো যাবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক খামারি।
গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতকান্দি এলাকার রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী তার বাড়িতে এক বড় খামার করেছেন। তাঁর খামারে ১০টি গরু বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত করেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি খামারে গরু পালন করছেন। তাঁর খামারে এবার পিজিআন জাতের একটি গরুর ওজন হয়েছে প্রায় ৩৬ মণ। গরুটির দাম হাঁকিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। বাকী গরুগুলোর ওজনও প্রায় সাত-আট মণ করে। এবার বেশি আয়ের আশা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তার গরুগুলো বিক্রি নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। প্রতি বছর কোরবানির ঈদেও এক-দুই মাস আগে থেকে ব্যাপারীরা এসে গরুর দর-দাম করে নিয়ে যেতে। বাকী গরুগুলো তিনি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ও চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করতেন। তবে এবার এখন পর্যন্ত ব্যাপারীদের কোন খোঁজখবর নেই। এতে বুঝা যাচ্ছে এবার মনে তাকে লোকসান গুণতে হবে।
খামারি শাহিদ ফরিদ জানান, করোনা সংকটের কারণে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রনোদনা দিচ্ছে। খামারিদের প্রনোদনা না দিয়ে গোখাদ্যের দাম কমিয়ে দিলে তারা উপকৃত হতেন। করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির হাট বসলেও বাজার খুবই মন্দা চলছে।
সোনাগাজী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার উপজেলার ভূঁইয়াবাজার ও মতিগঞ্জ বাজার পরিদর্শনে গিয়ে সামাজিক দূরত্বে কিছুই পাননি। মানুষের জন্য বাজারে হাঁটা-চলা করতেও মুশকিলে পড়েন। তিনি সব খামারিকে অনলাইনে পশুর হাট বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি কোরবানি করা ব্যক্তিদেরকে হাটের জন্য বসে না থেকে বাড়ি গিয়ে বা অনলাইনে পশু কেনার আহবান জানান।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনিছুর রহমান জানান, করোনা পরিস্থিতিতেও জেলায় ৫৮টি কোরবানির হাট বসছে। জেলার যেসব বাজাওে বেশি পশু বিক্রি হয়, সেসব বাজারগুলোতে মেডিকেল টিম বসবে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি