বিশ্বের করোনার পরিস্থিতি খারাপ ও বাংলাদেশের করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে সরকারি আদেশে এদেশের কিন্ডারগার্ডেনসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
বন্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া নিজস্ব আয়ে চলা ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে ৬ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা দারুন আর্থিক সংকটে পড়ে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে হাজার হাজার শিক্ষক কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন, কিন্ডারগার্টেনের বিভিন্ন সংগঠন আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে সরকারের কাছে বিভিন্ন সময়ে আবেদন, স্মারকলিপি, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু সরকার সব সেক্টরের সহযোগিতা করলেও শুধুমাত্র কিন্ডারগার্টেন সেক্টরে কোন সহযোগিতা করেননি।
জানামতে, বাংলাদেশের কোথাও কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষকরা কোনো সুবিধা পাইনি অথচ গত ৩০/০৪/২০২১ তারিখের ৭১টিভির টকশোতে মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী একজন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকারের তরফ থেকে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর টকশো অনুযায়ী সরকার আর্থিক সহযোগিতা করলে সেই টাকা গেল কোথায়? স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সব কিছু খুলতে পারে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না কেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিলে, দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ টিভির টক শো তে এসে তার বিরোধিতা করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে নাকি সব ছাত্র-ছাত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে।
সকল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে দিলে সবাই রাস্তায় নেমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো খোলার জন্য আন্দোলন শুরু করে দিত এবং বুদ্ধিজীবীরা টকশোতে তাদেরকে সমর্থন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সরকারকে চাপ দিত।ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া, অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে বাড়িতে পরীক্ষা নেওয়া উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। কারণ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি,তাই দেশের ৭০% ছাত্র-ছাত্রী অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রী, খুনখারাবি, ইয়াবা সেবন, মাদকাসক্ত ও অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে।দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ঝরে পড়ার হার ও বেড়ে যাচ্ছে। অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন জায়গা নেই তাই শিক্ষকদের বেতন এবং ঘর ভাড়ার জন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে হাজার হাজার শিক্ষক কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া অতীব জরুরী।
লেখক : অধ্যক্ষ, বিকিরণ কিন্ডারগার্টেন।