ফেনীর সোনাগাজীতে গত ২০ দিনে উপজেলার বগাদানা ও মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের চার গ্রামের চারটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয়দর মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। হঠাৎ করে ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে রাত্রিকালীন চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারায় নেমেছে গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয়রা।
এছাড়া গত ২০দিনে শুধুমাত্র পৌরসভা এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ৮টি দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। বাসা-বাড়িগুলো থেকে অজ্ঞাতনামা চোরের দল ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ও স্থানীয়রা জানায়, চলতি মাসের ৫ তারিখ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারী এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের বাড়ি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের দশপাইয়া এলাকায় ওমান প্রবাসী মো. সুমনের বাড়ি। সর্বশেষ গত শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের সেনেরখিলে গাড়ী চালক দেলোয়ার হোসেনের ও মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মঙ্গলকান্দি এলাকায় আবু আহমেদের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর দাবী চারটি বাড়ি থেকে ডাকাতদল ২০ভরি স্বর্ণালংকার, নগদে ২লাখ ৫০হাজার টাকা, ১৮টি মুঠোফোনসহ ও কাপড় চোপড়সহ সাড়ে ১৮ লাখ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিয়ে গেছে। এসব ঘটনায় ডাকাতের হামলায় নারী-শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।
চলতি মাসে চারটি ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও থানায় মামলা হয়েছে মাত্র দুটি। তবে ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু ডাকাতি হওয়া কোন মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো জানায়, রাতে মুখোশদারী ১০-১৫জনের সশস্ত্র ডাকাত প্রতিটি বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেধে মালামালগুলো লুট করে নিয়ে গেছে।
পৌরশহরের স্বর্ণ ব্যবাসীয় শাহ জাহানের স্ত্রী শাহিনা আক্তার দাবী করেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি পাশে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান। সন্ধ্যা ৭-৯টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তাঁর রান্না ঘরের লৌহার জানার রড ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তিনটি কক্ষের একটি আলমিরা ও তিনটি ওয়ার ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে আট ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদে ৪০ হাজার টাকাসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। এঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বলেন, চলতি মাসে হঠাৎ করে পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে চার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটায় তাঁর ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জনগনের জানমালের রক্ষায় এবং রাত্রিকালীন চুরি, ডাকাতিসহ যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠোকানোর লক্ষ্যে ইউপি সদস্যদের নিয়ে বেঠক করে পরিষদের উদ্যোগে একজন দফাদারের নেতৃত্বে ১০জন গ্রাম পুলিশ গত রোববার রাত থেকে পুরো ইউনিয়নে টহল (পাহারা) শুরু করেছে। গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রাত্রিকালীন নিজের জান মালের রক্ষায় তাঁদের সঙ্গে এগিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, গত রোববার ও সোমবার তাঁর ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে ডাকাতি প্রতিরোধে সবাইকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া মসজিদে নামাজের সময় ইমামগণও স্থানীয়দেরকে সর্তক থাকতে বলেছেন।
এদিকে উপজেলার বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান ইছহাক খোকন ও মঙ্গলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন চলতি মাসের তাঁদের ইউনিয়নে চারটি ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন। তাঁরাও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয়দের সম্বনয়ে এলাকায় এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ চলতি মাসে উপজেলায় চারটি ডাকাতির ঘটনার মধ্যে দুটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অন্যরা থানায় মামলা করতে রাজি হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ প্রতিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে কয়েকজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ ডাকাতদের গ্রেপ্তারের পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তের সহযোগীতায় বহিরাগত পেশাদার ডাকাতেরা একের পর এক ডাকাতি ঘটনা ঘটনাচ্ছে। তিনি বলেন, ডাকাতি প্রতিরোধসহ এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সর্বাত্মক ভাবে চেষ্টা করছে। তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি/এপি