ফেনী রেজিষ্ট্রি অফিসে মিথ্যা তথ্যে অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভূমি রেজিষ্ট্রি করার অপরাধে জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও দলিল লেখকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ৪৫ লাখ ৬ হাজার ৬শ ২৭ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাতে সদর সাব-রেজিষ্ট্রার মো. শাহআলম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে ফেনী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে বারাহীপুর মৌজার ৩৫৪৩ খতিয়ানের ভবনসহ ৭ দশমিক ৭৩ শতক ভূমি রেজিষ্ট্রির সময় রাজস্ব ফাঁকি দিতে ২ কোটি ৫ লাখ ৭ হাজার ৩শ ১৬ টাকা কম দেখিয়ে রেজিষ্ট্রি করা হয়। যার দলিল নং ২৮৭৬, বালাম বই নং ১১০, পৃষ্ঠা নং ১০৯-১১৭। ওই সময় সদরে সাব-রেজিষ্ট্রারের দায়িত্বে ছিলেন মো. মনিরুল ইসলাম।
দলিলে ভূমির মূল্য উল্লেখ করা হয়, ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও ভবনের মূল্য ধরা হয় ১০ লাখ টাকা। রেজিষ্ট্রি অফিসের হিসাব অনুযায়ী ভবনের মূল্য প্রতি বর্গফুট ১ হাজার ২শ টাকা করে ২ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ৩শ ১৬ টাকা হবে। কিন্তু প্রতারণামূলকভাবে ২ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ৩শ ১৬ টাকার স্থলে শুধু ১০ লাখ টাকা দেখিয়ে রেজিষ্ট্রি করা হয়। এতে সরকারের ৪৫ লাখ ৬ হাজার ৬শ ২৭ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়। এনিয়ে ২০১৭ সালে জুন মাসে তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় শুরু হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে ফেনী রেজিষ্ট্রি অফিসে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি তাদের নজরে আসে। পরে দুদক রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে তদন্তের জন্য ফেনী গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম.আর এনায়েত উল্যাকে নির্দেশ দেন। দলিলে ৫ তলা ভবন উল্লেখ করা হয়। তদন্তে ৬ তলা বাড়ী ও ছাদের ওপর টিনশেড ঘর উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন এনায়েত উল্যাহ। তিনি ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারী দুদকের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মশিউর রহমানের নিকট প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরও ফেনী রেজিষ্ট্রি অফিস মামলা দায়েরে গড়িমসি করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর দুদক আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশ দেয়।
এ মামলার আসামীরা হলেন জমি বিক্রেতা সোনাগাজী উপজেলার কুঠিরহাটের মৃত সৈয়দের রহমানের ছেলে মো. শহীদ উল্যা, ক্রেতা সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বগইড় গ্রামের হাজী আবদুল সালামের ছেলে মো. আবুল কালাম, তার ভাই গিয়াস উদ্দিন, মো. ইব্রাহিম হারুন, মো. সালাহ উদ্দিন, দলিল তৈরিকারক ধর্মপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে মীর হোসেন স্বপন (সনদ নং-২২৬)।
তবে মামলায় সদরের সাব-রেজিষ্ট্রার মনিরুল ইসলামকে আসামী না করায় অনেক দলিল লেখক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মামলায় ফেনী গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম.আর এনায়েত উল্যাহ, সদর সাব- রেজিষ্ট্রি অফিসের টিসি মোহরার আবুল কালাম ও মমতাজুল হক এবং অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে স্বাক্ষী করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হবে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এপি