সমকালীন জীবন-যন্ত্রণার নির্জন ভাষ্যকার কবি জাহাঙ্গীর আলম সৈয়দের লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘রাজহাঁসের ডানায় মৃত্যুর আর্তনাদ’ একুশে বইমেলার ’সাহিত্যদেশ’ ৫৯৪ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের ৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হলো।
কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে কবি ও গবেষক শাবিহ মাহমুদ বলেন, সমকালীন জীবন-যন্ত্রণার নির্জন ভাষ্যকার কবি জাহাঙ্গীর আলম সৈয়দের কবিতা সহজিয়া ধারায় রাজনৈতিক সচেতনতায় আচ্ছাদিত। তার কাব্যচৈতন্যে ঘুরে ফিরে আসে দেশ ও মানুষের অধিকারের কথা। উচ্চারণে তিনি উচ্চকণ্ঠী, বলিষ্ঠ ও বিবেকবান। তিনি দায়বদ্ধ বৃক্ষ হয়ে ঝুকে পড়েন রহস্যনদীর কিনারায়। সে নদীর পার ভাঙার শব্দ তাকে আমূল তীরবিদ্ধ করে সময়ের প্রতিরূপ রাজহাঁসের প্রতীকে। কবি সে যন্ত্রণার প্রতিশোধ গ্রহণ করেন আভরণহীন উদ্দামে। আবেগের বুনো ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি জয় করতে চান মানবিকতার সকল শর্ত। তখন তার হাতের ছড়ির সপাং সপাং আঘাতে জর্জরিত হতে চায় সকল অশুভ। ‘রাজহাঁসের ডানায় মৃত্যুর আর্তনাদ’ সে চিত্রেরই প্রতিধ্বনি।
জীবনবাদী এই কবি উচ্চারণ করেন ‘রাতা মোরগের ঘাড় মোচড়ায় পাতিশিয়াল’, ‘অহমের মসনদ ধসে পড়ুক’, ‘এখানে এখন কেউ ভালো নেই কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া’, ‘প্রতিটি লাশের জীবন ফিরিয়ে দাও’; তখন কবিহৃদয়ের বেদনা সহজেই সঞ্চারিত হয় পাঠকের শিরায়। এ কাব্যে চব্বিশের বাংলাদেশকে ধারণ করা হয়েছে যথার্থ আয়োজনে- উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কবিতায়। জাহাঙ্গীর আলম সৈয়দের কবিতার আরেক সৌন্দর্য প্রেমানুভূতি ও নস্টালজিয়া।
এ কাব্যে- ‘স্বেচ্ছাচারী রাষ্ট্রে সবাই ডিক্টেটর’ ও ‘কুকীর্তির খতিয়ান’-এর মতো রাজনৈতিক কবিতার পাশে সগর্বে স্থান করে নিয়েছে প্রচলিত রোমান্টিক ধারার ‘স্বাপ্নিক সাবমেরিন’, ‘হায় চাঁদ রূপোলি জ্যোৎস্নার চাঁদ’, ‘বিজন রাতের সাকি’, ‘চত্বাল জমিন’, ‘সেদিন কল্পিতা নিশ্বাসে জেগেছিল’, ‘সৈকত পান করে লাবণ্যের জল’ ও ‘প্রেমের চৌপদী’র মতো শিল্পাকাঙ্ক্ষী কবিতা।
কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক জাহাঙ্গীর আলম সৈয়দের জন্ম ১ মার্চ ১৯৮১ সালে ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের কেরোনীয়া গ্রামে। পিতা সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, মাতা গুলনাহার বেগম। দুই ভাই তিন বোনের মাঝে তিনি সবার ছোট। নিজ বাড়ির নিকটবর্তী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যায় তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘রুখে দাও আগ্রাসন’ (২০২১), গল্পগ্রন্থ: ‘ভালোবাসা রং বদলায়’ (২০২০), কাব্যগ্রন্থ: ‘আর্তনাদ’ (২০০৭), উপন্যাস : ‘রক্তের ঋণ’ (২০০৭)। উপর্যুক্ত চারটি গ্রন্থ জাহাঙ্গীর আলম নামে প্রকাশিত হলেও বর্তমানে পৈত্রিক পদবি নিয়ে কবি জাহাঙ্গীর আলম সৈয়দ নামে নতুনভাবে পথ চলা শুরু করেছেন। তিনি বিভিন্ন পত্রিকা ও সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত লিখে আসছেন কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় কলামে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে তিনি নিয়মিত প্রবন্ধ লিখছেন।
ছাত্রজীবন শেষে শিক্ষকতাকে তিনি সম্মানজনক জীবিকা হিসেবে বেছে নেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি বাংলা বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন। কবি জাহাঙ্গীর আলম সৈয়দ ব্যক্তিজীবনে স্বাধীনচেতা, মুক্তমনের সমাজহিতৈষী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন প্রতিবাদী ব্যক্তি হিসাবে সুপরিচিত। একজন সদাহাস্য ও সজ্জন হিসাবে সমাদৃত।
নতুন কাব্যগ্রন্থটি এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশ করায় কবিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফেনী ট্রিবিউন এডিটর আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, বইটিতে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কয়েকটি কবিতা স্থান পেয়েছে। যা এই বইটিকে ইতিহাসের অংশ ও অমরত্ব দান করবে। কাব্যগ্রন্থটি বইমেলা ছাড়াও ফেনীর ফিরোজ লাইব্রেরী সহ বিভিন্ন লাইব্রেরীতে পাওয়া যাচ্ছে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি