বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ও জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা, ফেনী কোর্ট মসজিদের সাবেক পেশ ইমাম ও খতিব, ফেনী আলিয়া মাদ্রাসারা সাবেক শিক্ষক মাওলানা কবির আহমদ রহ.এর ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল রোববার। ১৯৯৮ সালের ২৫ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২ বছর।
মাওলানা কবির আহমদ রহ. জাতীয় পর্যায়ে সারা দেশে বিশেষত বৃহত্তর নোয়াখালী, চট্রগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম ও ওয়ায়েজ ছিলেন। তিনি ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছাতে ছুটেছেন এই অঞ্চলের প্রায় ছোট বড় সব শহর ও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিভিন্ন মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলনে তিনি ছিলেন সকলের আকর্ষণীয় ওয়ায়েজ ও মধ্যমনি ব্যাক্তিত্ব। মুসল্লিরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাঁর মনোমুগ্ধকর ওয়াজ শুনতে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও ক্লান্তি অনুভব করতো না। মাঝে মাঝে বিভিন্ন মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ওয়াজ করলে ও শ্রোতারা তাঁর মনোমুগ্ধকর ও জাদুময়ী ওয়াজ শুনতে শুনতে একটুও বিরক্ত না হয়ে ধৈর্য ধরে বসে থাকতেন। তার বক্তব্য মানুষকে মোহিত এবং অনুপ্রাণিত করতো। তিনি তাঁর ওয়াজের মাধ্যমে শ্রোতাদের অন্তরে ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা জাগ্রত করতে অতুলনীয় ছিলেন।
তাঁর ওয়াজ শুনতে দূর দুরান্ত থেকে মানুষ ফেনী কোর্ট মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নিতেন। তখনকার সময়ে ফেনী কোট মসজিদ ছিলো ফেনীতে উলামায়ে কেরামের মারকাজ। ফেনী জেলার শীর্ষ আলেমগণ এখানে বসেই নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। ফেনী জেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ও ঈদগাহ ময়দানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে মুরব্বি হিসেবে ভূমিকা পালন করতেন। তিনি ছিলেন সকলের কাছে একজন গ্রহনযোগ্য ও মান্যবর আলেমেদ্বীন। ধর্মীয় জ্ঞান ও আমলের সাথে সাথে সুন্দর নববী আখলাক এর অধিকারী ছিলেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত করতেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে সারা দেশের মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিল। তাঁর শোকে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ছিল ফেনীতে। ফেনী মিজান ময়দানে তার জানাজায় সর্বস্তরের মানুষ একত্র হয়েছিল তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে বিদায় জানাতে।
তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রসৈনিক জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর ছেলে মাওলানা আসআদ মাদানীর এই অঞ্চলের প্রিয় শিষ্য ও প্রতিনিধি ছিলেন। ইসলাম বিরোধী সকল কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর।
তিনি কিছুদিন ঐতিহ্যবাহী বিরিঞ্চি সুফিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়াও তিনি ফেনী জেলা ইমাম সমিতি এবং ইসলামিক মহা সম্মেলন বাস্তাবায়ন কমিটি, ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সহ ইসলামীক ও সামাজিক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। ফেনী কোট মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসা, ফেনী জামেয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা ও হরিপুর মজিদিয়া মাদ্রাসা সহ বেশ কিছু দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
মাওলানা কবির আহমদ রহ.২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফেনী কোর্ট মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও তার বড় ছেলে মুফতি মাহমুদুল হাসান তার মরহুম পিতার রুহের মাগফেরাত এর জন্য সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি