আজ

  • শনিবার
  • ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গল্পের একজন জেলা প্রশাসক অন্যজন জিয়াউল আলম মিস্টার

  • আরিফুর রহমান
  • গত পরশুদিন আমার মাথায় একটা চিন্তার উদয় হলো। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে বাড়ির প্রধান সবাই বলছে করোনা প্রতিরোধে সকলেই সচেতন থাকতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সাবান-হ্যান্ডওয়াশ স্যানেটাইজেশনের মাধ্যমে সুরক্ষা থাকতে হবে। এমন বক্তব্য কী সমাজের সব মানুষের জন্য? সমাজে বিশাল একটা অংশের কথা কেউতো বলছে না।আমি বলছি তাদের কথা যারা; সব দিক থেকে সুবিধাবঞ্চিত। এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা সাবান কিনে হাত ধোয়াকে মনে করে বাড়তি টাকা নষ্ট। মাস্ক না কিনে এক কেজি চাল বেশী কিনে দু’দিন উপোস না থাকা।

    এরকম একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাই। যমুনা টেলিভিশনের ন্যাশনাল ডেক্স ইনচার্জর সাথে আলোচনা করলাম। তিনি এপ্রোবাল করলেন। সাথে সাথে মাঠে নেমে পড়লাম। কাজ করলাম। কাজ করতে গিয়ে অন্যরকম সাড়া পেলাম। তখনো প্রতিবেদন প্রস্তুত করিনি। প্রথমে ফেনীর মান্যবর জেলা প্রশাসকের সাথে বিষয়টি আলোচনা করলাম টেলিভিশনের বক্তব্যের জন্য। তিনি বক্তব্য দিলেন। সাথে সাথে জেলা প্রশাসক বললেন, সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কিছু করা দরকার। আজই করতে চাই। তিন ঘন্টার ব্যবধানে পথ শিশু ও ফেনীর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সাবান-হ্যান্ডওয়াশসহ স্যানেটাইজেশনের প্রয়োজনীয় সামগ্রি বিতরণ করলেন।

    এরমধ্যে যুক্ত হলো ফেনীর অসহায় মানুষের আস্থার ঠিকানা; ‘সহায়’ সংগঠনের সভাপতি মনজিলা মিমি। তাকে নিয়ে গেলাম ফেনীর লালপুল বেদেপল্লীতে।সেখানে মানুষের বসবাস দিয়াশলাইয়ের কাঠির মতো। গিয়ে দেখলাম হাহাকার। সেখানে মিমির উপস্থিতি দেখে তারা ধরে নিলো; নিশ্চয়ই কোনো সুখবর নিয়ে এসছে মিমি। কিন্তু না, সেখানে আমরা গেলাম মূলত তাদের স্যানেটাইজেশন ব্যবস্থা নিয়ে কিছু চিত্র ধারণ করতে। ক্যামরায় ধারণ করলাম।তাদের জিজ্ঞেস করলাম। সাবান দিয়ে কী তোমরা হাত ধোও? তার উত্তরে তারা বললো, “ময়ালে (গ্রামে) যেতে পারি না। পেটে ভাত জোটে না। আবার সাবান হ্যান্ডওয়াশ! ধুর মিয়া আগে ভাতের কথা কন।” তখন কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শেষ করলাম।

    আর মনে মনে ভাবলাম। এতক্ষণ যা করলাম সবইতো সাংবাদিকতা। এতসব অসহায় মানুষের জন্য কী করলাম। আমার চিন্তার সাথে মিমির চিন্তাও মিলে গেলো। মিমি বললো আরিফ ভাইয়া কী করা যায়? এসব ভাবনায় কেটে গেলো কিছুক্ষণ। পরে আমি বললাম, মিস্টার ভাইয়ের সাথে আলাপ করে দেখতে পারো। মিমি আলাপ করলেন, আর সাথে সাথে মিস্টার ভাইও রাজি হয়ে গেলেন। প্রথমে সিদ্ধান্ত হলো স্যানেটাইজেশনের। যাদের পেটে ভাত নাই; তাদের কাছে স্যানেটাইজেশনের বয়ান করা মানে ক্ষুধার্ত বাঘের কাছে মুড়ির মোয়া ধরা ।মিমির সাথে যুক্ত হলো তাঁরই সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার দুলাল তালুকদার ও জুলহাস তালুকার।তারাও প্রাণান্তকর চেষ্টা করলেন এসব মানুষদের জন্য কিছু করার। আর সেটি গিয়ে ঠেকলো পাঁচ কেজি চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনী ও স্যানেটাইজেশন সামগ্রিক বিশাল পসরায়।লেখার পরিধি বড় হয়ে যাচ্ছে এখানে শেষ করবো। করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতি অনেক দিনমজুর, কুলি, রিকশাড্রাইভার, হিজড়া সম্প্রদায় মানবেতর জীবন-যাপন করবে। তাদের পাশে এগিয়ে আসুন। পরিশেষ বলবো, ফেনীর জেলা প্রশাসক জনাব মো. ওয়াহিদুজজামান স্যার ও ফেনীর তরুণ রাজনীতিবিদ জিয়াউল আলম মিস্টার ভাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

    লেখক: জেলা প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন ও দৈনিক আমাদের সময়।


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090