ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন রাজাঝির দীঘির প্রবেশপথে জমে উঠেছে সপ্তাহব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। গ্রন্থমেলাকে ঘিরে লেখক-প্রকাশক দুটোই বেড়েছে। সেই সাথে বিক্রিও হচ্ছে বেশ।
মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে জানা গেছে, শহরের রাজাঝির দীঘির প্রবেশপথে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১৬টি স্টলের মধ্যে বিভিন্ন লাইব্রেরির অংশগ্রহনের পাশাপাশি স্থানীয় তিনটি প্রকাশনা সংস্থার স্টল রয়েছে। এসব স্টল সাজানো হয়েছে স্থানীয় লেখকদের সারি সারি বইয়ে। স্থানীয় কবি-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধীক-সাংবাদিক ও গল্পকারদের সর্বাধিক বই প্রকাশ করেছে ভাটিয়াল। প্রকাশক আলমগীর মাসুদের এ সংস্থা থেকে এবার প্রকাশিত ১৮টি বইয়ের ১১টিই ফেনীর লেখকদের। এর মধ্যে রয়েছে কামাল হাসান চৌধুরীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘জীবনের ধারাপাত’, তানভীর আলাদীনের ‘হৃদিতা তুই এমন কেন’, রাশেদা আখতারের ‘ভাবনায় প্রাথমিক শিক্ষা’, মোহাম্মদ আবু তালেবের ‘প্রাথমিক শিক্ষার কিছু কথা’, মো: সাইফুল ইসলাম ভূঞার ‘আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ও আমার উপলব্দী’, মো: আবদুল ওয়াদুদের ‘পথ চলিতে’, আরিফুল ইসলাম টিপুর ‘কবিতা ঘরে বিষন্ন মুখ’, আরিফুল আমিন রিজভীর ‘মুদ্রণ শিল্পের কথা- অতীত ও বর্তমান’ রয়েছে।
হেলাল শাহাদাতের প্রকাশনা সংস্থা ‘পানকৌড়ি’। এবার ১৪টি বই প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে রোকেয়া রহমান কেয়ার ‘চেতনাময়ী মুজিব’ ও ‘পুলকিত মনে আছি দাঁড়িয়ে’, মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরীর ‘একুশের বর্ণমালায় ৭১’ ও ‘স্বরচিত আধুনিক বাংলা গান’, মুহাম্মদ ফজলুল হকের ‘জীর্ণপাতা’, হেলাল শাহাদাতের ‘চিত্রে বঙ্গবন্ধু’, ‘সকিনার সতিত্ব’, মো: শাহআলমের ‘যে হাসিতে মুক্তো ঝরে’, মো: মোবারক হোসেনের ‘মায়ের আঁচল’, এ আই টিপুর ‘আমি আজ নিস্তব্দ’, রাসিক রহস্যের ‘প্রতিক্ষায় অবেলা’, মো: জাহিদুল ইসলাম জিহাদের ‘তোমার নামে অনুকাব্য’।
আরেকটি প্রকাশনা সংস্থা ‘নোলক’। প্রথমবারের মতো এ সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ৭টি বই। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক রফিক রহমান ভূঞার নির্বাচিত গীতি সংকলন ‘এক জীবনের গান’। এছাড়া ব্যাংকার ও প্রাবন্ধীক মোহাম্মদ সফিউল হকের ‘শীত নিদ্রায় বসন্ত’, মুহাম্মদ ইছমাইলের ‘প্রবাস উপাখ্যান’, মাষ্টার মো: শাহআলমের ‘সোনালী মুকুট’, ডা. আবদুল হান্নান জাহিদের ‘অবুঝ অরণ্য’, শাকিল মাহমুদের ‘ভ্রম বিভ্রমের গল্প’, মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরীর ‘মোহাম্মদ আলী চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ’ প্রকাশিত হয়েছে।
কবি ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ সফিউল হক বলেন, ‘নোলক’ থেকে আমার প্রথম কাব্যগ্রস্থ প্রকাশিত হয়েছে। উনাদের কাজের মান ও ধরণ আমার ভালো লেগেছে। মফস্বল শহর থেকে জাতীয় মানের বই প্রকাশ হচ্ছে এটাই আশার কথা। এটার ফলে আমাদের মতো কর্মজীবি লেখক-সহিত্যিকরা নানা ধরণের ভোগান্তি লাঘব হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি ও গীতিকার রফিক রহমান ভূঁইয়া বলেন, একসময় ফেনীতে কোন বই মেলা হতো না। সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানও ছিলো না। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বর্ণকুঠিরে পাঠ্যপুস্তক ছাপাতাম। এটা দূরুহ ছিল। এখানকার লেখকদের দু’চারটি বই করতে ঢাকায় যেতে হতো। ১৯৬৪ সালে ঝর্ণা পুস্তকালয় থেকে আমি একটি বই প্রকাশ করেছিলাম। ইদানিং প্রযুক্তিগত কারনে পুস্তক প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর বিপ্লব সাধিত হয়েছে। লেখক সংখ্যাও বেড়েছে। পাঠকও বেড়েছে। সুতরাং ফেনীতে এই জাতীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাম্য। তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সাধুবাদ জানাই।
ভাটিয়াল প্রকাশক আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, বই প্রকাশ নিয়ে দুই বছর আগে কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রকাশনার ক্ষেত্রে আগ্রহ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় কোন লেখক বই প্রকাশ করতে একদিকে ঢাকায় গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না, অন্যদিকে অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে। এবার ভাটিয়াল প্রকাশনী ১৮টি বই প্রকাশ করেছে। আরো তিনটি বই দু’একদিনের মধ্যে মেলায় আসছে। আগামী মাসে আরো ৭টি বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
নোলক প্রকাশনের প্রকাশক রাশেদুল হাসান বলেন, নোলক সব সময় মানসম্মত ও সৃজনশীল বই প্রকাশ করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারো বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছে ‘নোলক’। আমাদের চেষ্টা থাকবে এখানকার লেখক-সাহিত্যিকদের ফেনী মুখি করে তোলা। যাতে করে তারা ফেনী বসে মানসম্মত বই প্রকাশ করতে পারেন।
পানকৌড়ির প্রকাশক হেলাল শাহাদাত বলেন, শুধু মেলাকে কেন্দ্র করে নয়, সারা বছরই বই প্রকাশ হওয়া উচিত। আমরা সারাবছর সেরা বইটি বের করতে চাই।
সম্পাদনা : এএএম/এমপি