আজ

  • শুক্রবার
  • ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও দাগনভূঞা পায়নি একজন সংসদ সদস্য

  • নূর শাহ মোহাম্মদ আজাদ
  • ফেনী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হচ্ছে দাগনভূঞা। ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হয়েছে এই উপজেলা। যার আয়তন ১৪১.৭১ বর্গ কিলোমিটার। প্রায় ৩ লক্ষ লোকের বসবাস। এখানে জন্মগ্রহণ করেছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সূর্য সন্তান শহীদ আব্দুস সালামসহ শতকৃতি সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে ছিল অত্র অঞ্চলের মানুষের অগ্রণী ভূমিকা। ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা ও জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই এই অঞ্চলের কৃতি সন্তানরা। জাতীয় রাজনীতিতেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই অঞ্চলের জনগণের দুঃখ স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিবাহিত হলেও দাগনভূঞা উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী একজন জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি।

    ভৌগলিক দিক থেকে এই অঞ্চলকে কখনো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, কখনো সেনবাগ উপজেলা, কখনো ফেনী সদর উপজেলা, আবার কখনো সোনাগাজী উপজেলার সাথে যুক্ত করে সংসদীয় আসন সৃষ্টি করা হয়েছে। যার পিছনে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ। ১৯৭১ সালে সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ স্থান করে নেয়।

    বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে। তৎকালীন নোয়াখালী-৪ আসনের আওতায় কোম্পানীগঞ্জ ও দাগনভূঞা প্রথম নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে কোম্পানীগঞ্জের আবু নাসের চৌধুরী নির্বাচতি হন। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন।
    ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচনা হয়েছিল। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী ক্ষমতা লোভী কুখ্যাত খন্দকার মোস্তাক আহম্মদ কিছু দিন স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছিলেন।
    ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। ১৯৭৬-৭৮ সালে সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান ও প্রধান বিচারপতি সায়েম জরুরি অবস্থা জারি করেন।

    ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয় লাভ করে; তারা জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে। এসময় সংসদীয় আসন পরিবর্তন করে দাগনভূঞাকে সেনবাগের সাথে যুক্ত করে নোয়াখালী-৪ আসন গঠন করা হয়। এই নির্বাচনে সেনবাগ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ দ্বিতীয় নির্বাচনে সেনবাগের ডা. কে. এম. হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

    ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনা অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। এদিকে তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে ১৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

    ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তার ক্ষমতাচ্যুত হন। তৎকালীন সেনা বাহিনী প্রধান লে. জেনারেল হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতায় আরোহন করেন। ১৯৮৪ সালে মহকুমা ভেঙ্গে ফেনীকে আলাদা জেলা এবং দাগনভূঞা আলাদা থানায় রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৮৬ সালে ৭ মে জেনারেল হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদের অধিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। তখন ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলাকে ফেনী-২ আসনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। আওয়ামীলীগ থেকে ফেনী সদরের জয়নাল আবদীন হাজারী নির্বাচিত হন। এদিকে দাগনভূঞা উপজেলার স্থানীয় প্রার্থী ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর মকবুল আহমদ। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। পূর্বের নির্বাচনের বিজয়ী বিএনপি এই নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। আবারও সংসদীয় আসন পরিবর্তন করে ফেনী সদর উপজেলা ও দাগনভূঞা উপজেলা নিয়ে ফেনী-২ আসন গঠন করা হয়। তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী সদরের জয়নাল আবদীন হাজারী আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

    ১৯৮৮ সালে ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করেছিল; উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মুজাফ্ফর) এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয় লাভ করে, তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন লাভ করে। ফেনী-২ আসনের আওতায় ফেনী সদর উপজেলা ও দাগনভূঞা উপজেলা চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী সদরের জয়নাল আবদীন ভিপি জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

    ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদের পতন হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। তার অধিনে তিন মাসের মধ্যে ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ছিল বঙ্গবন্ধুর কণ্যা শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৭৫টি দল থেকে মোট ২৭৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয় লাভ করে। তখনই প্রেসিডেন্সিয়াল থেকে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হয়।। তখন বিএনপি থেকে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়। তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪২টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে ফেনী-২ থেকে আওয়ামীলীগ প্রার্থী ফেনী সদর উপজেলার জয়নাল আবদীন হাজারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে দাগনভূঞার উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী এডভোকেট জয়নাল আবদীন বাসদ থেকে প্রতিদ্বদ্বিতা করেন।

    ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ৩০০টি আসনই লাভ করে। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় সংসদ ছিল এটি।

    ১৯৯৬ সালে ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ২৮১জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৮১টি দল থেকে মোট ২৫৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে। ফেনী-২ আসনের ফেনী সদর উপজেলা ও দাগনভূঞা উপজেলা থেকে আওয়ামীলীগ প্রার্থী ফেনী সদরের জয়নাল আবদীন হাজারী সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে দাগনভূঞা উপজেলার স্থানীয় ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে প্রতিদ্বদ্বিতা করে হেরে যান।

    ২০০১ সালে ১ অক্টোবর অষ্টম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪৮৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৪টি দল থেকে মোট ১৯৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। এটি হলো ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন লতিফুর রহমান। ফেনী-২ আসনের আওতায় ফেনী সদর ও দাগনভূঞা থেকে ফেনী সদরের জয়নাল আবদীন ভিপি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
    বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ-এর অধীনে।

    ২০০৭ সালের শুরুর দিকে জরুরী অবস্থা জারি করে যা ২০০৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তুলে নেওয়া হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ফেনীর সংসদীয় আসনকে আবারও পূণর্বিন্যাস করে দাগনভূঞা উপজেলা ও সোনাগাজী উপজেলাকে নিয়ে ফেনী-৩ আসন গঠন করা হয়। ফলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোনাগাজী উপজেলার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রার্থী মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন নির্বাচিত হন। এদিকে দাগনভূঞা উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী আওয়ামীলীগ থেকে আবুল বাশার প্রতিদ্বদ্বিতা করে হেরে যান। এই নির্বাচনকে ঘিরে দাগনভূঞাবাসী আশা বেঁধে ছিল। দাগনভূঞা উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী একজন সংসদ সদস্যপ্রার্থী হয়েছে তাকে দলমত নির্বিশেষে আঞ্চলিকতার টানে তাকে নির্বাচিত করবে। শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

    ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনের আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে সোনাগাজী উপজেলার রহিম উল্যাহ নির্বাচিত হন। এদিকে আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি রিন্টু আনোয়ারকে মনোনয়ন দেয়। রিন্টু আনোয়ার ছিলেন দাগনভূঞায় জন্মগ্রহণকারী। রাজনীতির বিভিন্ন হিসাব নিকাশে তিনি শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারেননি। দাগনভূঞার স্থানীয় ভোটারা এবারও চরমভাবে হতাশ হয়েছে।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সর্বশেষ নির্বাচনেও ফেনী-৩ আসনকে মহাজোটের আসন হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (অব:) সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনিও সোনাগাজী উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী। এবারও দাগনভূঞায় জন্মগ্রহণকারী সংসদ সদস্য পায়নি।
    ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এই সময়ে দাগনভূঞায় জন্মগ্রহণকারীদের থেকে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে দাগনভূঞা এখনও উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনে দাগনভূঞা উপজেলার বাহিরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। আঞ্চলিকতার টানে এক্ষেত্রে উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে এই জনপদ।

    দাগনভূঞায় উপজেলায় সরকারী কোনো স্কুল, কলেজ ছিল না। ২০১৮ সালে সারাদেশে ২৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ ঘোষণা করা হলে। দাগনভূঞার ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজকেও জাতীয়করণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এখনও তা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি আতাতুর্ক মডেল হাই স্কুলকে জাতীয়করণের ঘোষণা করা হয়। এই অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের দাবী একটি সরকারী বালিকা বিদ্যালয়। এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবী।

    ১৯৮৯ সালে এই উপজেলার একমাত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিল স্থাপিত হয়। যা এফবিসিসিআই এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল আউয়াল মিন্টু ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি উপজেলায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সহ নানা সেবামূলক কাজে অন্যতম অবদান রেখেছেন। এখানকার লোকজনের কর্মর্সংস্থানের জন্য প্রয়োজন কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

    দাগনভূঞা উপজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারে প্রবাসী রয়েছে। এই অঞ্চল প্রবাসী নির্ভর হিসেবে পরিচিত। সেহেতু অত্র অঞ্চলে একটি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে প্রবাসমূখী অদক্ষ কর্মী প্রবাসে দক্ষ কর্মী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। জাতীয় অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে। দূর হবে শিক্ষিত বেকারত্ব। যা সরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়া একান্তভাবে প্রয়োজন।
    সারা বিশে^ মেডিকেল নার্সিং এর বিপুল পরিমাণ চাহিদা রয়েছে। দাগনভূঞা উপজেলায় একটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার জোর দাবী জানান স্থানীয় জনগণ।

    দাগনভূঞা উপজজেলাবাসী একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দাবী দীর্ঘ দিন যাবত করে আসলেও আজও তা পূরণ হয়নি। অগ্নিকান্ডে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুক্ষিন হতে হয়।
    দাগনভূঞা উপজেলায় কোনো বিনোদন স্পর্ট গড়ে উঠেনি। যা আজ সময়ের দাবী।

    আগামী সংসদ নির্বাচনে দাগনভূঞাবাসী দল-মত নির্বিশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে ঐক্যবদ্ধ। প্রয়োজনে একটি প্লাটফর্মে রাজপথেও নামবে। তারপরও যেন আগামী সংসদ নির্বাচনে দাগনভূঞা উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। এই অঞ্চলের জনগণ মনে করে, এখানকার জন্মগ্রহণকারী জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পারলে দাগনভূঞাবাসীর এসকল দাবীগুলো জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করবে।

    তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া

    লেখক: উন্নয়ন ও সমাজকর্মী


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090