ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া কথাগুলো। বোনের মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। বোনের কথা মনে হলেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন।
‘একজন ভাইয়ের জন্য এর চেয়ে কষ্টের কি হতে পারে- যে ভাইয়ের কোলে আদরের ছোট বোনটার অগ্নিদগ্ধ ক্ষতবিক্ষত শরীর থাকে। একজন ভাইয়ের জন্য এর চেয়ে কষ্টের কি হতে পারে যে ভাই তাঁর প্রিয় ছোট বোনটাকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে একসময় নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া দেখে? একজন ভাইয়ের কাঁধে তারই আদরের ছোট বোনের লাশের চাইতে ভারী পৃথিবীতে আর কি থাকতে পারে?
ফেসবুক স্ট্যাটাসে নোমান আরও লিখেছেন, আমি কি করে ভুলবো ৮০ ভাগ পুড়ে যাওয়া প্রিয় বোনটার কষ্টের প্রতিটি মুহূর্ত। আদরের ছোট বোনের শরীরের পোড়া গন্ধের চেয়ে কষ্টের কি হতে পারে?
মাদ্রাসা গেট থেকে বিদায় দেওয়ার কিছু সময় পর যখন ফোনে আগুন লাগার কথা শুনতে পাই নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। মাদ্রাসা থেকে শুরু করে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেখান থেকে ফেনী তারপর ঢাকা। অ্যাম্বুলেন্সে থাকাকালীন বোন শুধু পানি পানি বলে হাহাকার করছিল।
ভাইয়া পানি দেন আমার শরীরে পানি দেন, আমাকে পানি খাওয়ান, আমার শরীর যে জ্বলে যাচ্ছে, তৃষ্ণায় যে বুক ফেটে যাচ্ছে…… পুরোটা সময় থর থর করে কাঁপছিলাম, বুকটা ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো।
চোখের পানিগুলো ঝরণা ধারায় ঝরছিল। ওই মূহুর্তটাতে শুধু এটুকুই চাইছিলাম, আল্লাহ আমার বোনটাকে বাঁচিয়ে দাও, আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও বাঁচিয়ে দাও।
আমি এমন এক হতভাগা ভাই, যার অতি আদরের ছোট বোনটি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে আকুতি জানিয়ে একফোঁটা পানি চেয়েছিল অথচ আমি ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাত্র একফোঁটা পানি দিতে পারিনি।
বোন আমার আইসিইউতে থাকাকালীন বলেছিল অসহ্য যন্ত্রণা আর কান্নাভরা কণ্ঠে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলেছিল ভাইয়া আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলবি আমি ভালো আছি, না হলে আম্মু কষ্ট পাবে।
এখন সন্ধ্যার পর ফোন দিয়ে কে বলবে, ভাইয়া তাড়াতাড়ি বাসায় আয় না হলে আম্মুরে দিয়ে ফোন করাচ্ছি। অর্ধেক কাপ চা খাওয়ার পর কাপটা কেড়েঁ নিয়ে কে বলবে, ভাইয়া চা বেশি খেলে ক্ষতি করবে এ বলে নিজেই খেয়ে নেবে। আপনাদেরতো বোন আছে, আমারতো বোন নেই, আমি মনকে কি দিয়ে শান্তনা দেব বলতে পারেন?
আমার আদরের ছোট বোনটাকে যারা নৃশংসভাবে খুন করেছে, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার শাস্তি চাই, সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমার বোনটাকে যেন আল্লাহ জান্নাতবাসী করেন।
সম্পাদনা : এএএম/এটি