ফেনীর সোনাগাজীতে তিনটি সড়কের পাঁচটি স্থানে বড় ভাঙন। তাঁর ওপর আবার ছোট-বড় অসখ্য গর্তে ভরে গেছে সড়ক। ফলে দুটি সড়কে হেলেদুলে যানবাহন চললেও অপর সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অতিবৃষ্টি ও অপরিকল্পিতভাবে খাল খননসহ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ফেনী সোনাগাজীতে মিয়ার বাজার-আমিন উদ্দিন মুন্সির হাট, ডাক বাংলা-ভোরবাজার কসকা সড়ক, মতিগঞ্জ-আহম্মদপুর ও সোনাপুর সড়কের এমন চিত্র দেখা গেছে। সড়কের অবস্থা দিনদিন নাজুক হয়ে পড়েছে। পাকা সড়কগুলো এমন অবস্থায় বেশকিছু এলাকায় ভাঙনের কারণে মসৃণতা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মিয়ার বাজার-আমিন উদ্দিন মুন্সির হাট, ডাক বাংলা-ভোরবাজার কসবা ও মতিগঞ্জ বাজার থেকে আহম্মদপুর-সোনাপুর পযর্ন্ত এ সড়ক দিয়ে তিনটি ইউনিয়নের ভাদাদিয়া, স্বরাজপুর, ইসমাঈলপুর, পক্ষিয়া, চর এলাহি, জিৎপুর, আহম্মদপুর, পশ্চিম আহম্মদপুর, চর ডুব্বা,পূর্ব সফরপুর, দৌলতকান্দি, চর লামছি,চর কৃষ্ণজয়,চর ডুব্বা, চর সোনাপুর, মধ্যম আহম্মদপুরসহ ২২টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের প্রধান এ তিনটি সড়ক। যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় দুই ইউনিয়নের গ্রামগুলোর স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা কেউ পায়ে হেঁটে কেউ ঝুঁকি নিয়ে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে। তবে সড়কের ভাঙ্গা অংশ পার হতে চালক ও পথচারীদের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ার বাজার-আমিন উদ্দিন মুন্সির হাট সড়কের আহম্মদপুর অংশে গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি আর সঠিক নিয়মে খাল খনন না করায় সড়কের একপাশ ভেঙে খালে চলে গেছে। অন্য পাশেও ফাটল দেখা দিয়েছে। ডাক বাংলা-ভোরবাজার কসকা সড়কেরও একই অবস্থা দেখা গেছে। এদিকে উপজেলার মতিগঞ্জ বাজার থেকে ভাদাদিয়া ও আমিরাবাদ ইউনিয়নেনের পশ্চিম আহম্মদপুর এবং স্বরাজপুর এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে খাল খননের কারনে সড়কের তিনটি স্থানে একপাশ ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কার না করায়বৃষ্টির কারনে পুরো সড়কটিতে খানাখন্দে ভরে গিয়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল ব্যহত ও জন সাধারনকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাত কিলোমিটার এ সড়কটির আহম্মপুর অংশে দুই কিলোমিটারও মসৃণ নেই।
পশ্চিম আহম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন, বলেন, সংস্কার না হওয়ায় সড়কে গর্তের কারণে চলতে অসুবিধা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অপরিকল্পিত ভাবে খাল খনন করায় সড়কের বিভিন্নস্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা আরও বেশি দূর্ভোগে আছেন। তিনি বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলীকে লিখিত ভাবে আবেদন দিয়েও কোন সমাধান পাননি।
ভাদাদিয়া এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, সড়কটিতে গর্ত থাকায় এবং তাদের বাড়ির পাশে সড়কের এক অংশ ভেঙ্গে খালে চলে যাওয়ায় ভয়ে তিনি দুই ছেলে-মেয়েকে নিজে সঙ্গে করে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। ছুটি শেষে আবার বাড়িতে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, জরুরী প্রয়োজন ও কোন লোক অসুস্থ্য না হলে তাঁরা বাড়ি থেকে বের হননা।
মিয়ার বাজার-আমিন উদ্দিন মুন্সির হাট সড়কে সিএনজি চালক আবদুল কাদের বলেন, সড়ক ভালো থাকলে গাড়ী চালাতে সমস্যা হয় না। সড়কটির আহম্মদপুর অংশ ভেঙে খালে পড়ে যাওয়ায় গাড়ী নিয়ে সেখান দিয়ে যেতে ভয় লাগে। দ্রুত সংস্কার না হলে পুরো সড়কটি খালে চলে যাবে। এতে করে তাদেরসহ সকলের ভোগান্তি বাড়বে।
জানতে চাইলে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেজয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, সড়কগুলো সংস্কারের জন্য একাধিকবার স্থানীয় সরকার বিভাগকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। গত কয়েকদিনে সড়কগুলো আরও কয়েকটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আবারও বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রবিবার ও সোমবার উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম সরেজমিনে গিয়ে সড়কগুলোর ভাঙনের স্থানগুলো পরিদর্শন করে দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বলেন, মতিগঞ্জ-আহম্মদপুর-সোনাপুর সড়কটি দিয়ে সুস্থ্য লোক ছাড়া অসুস্থ্য কোন রোগি চলাচল করতে পারে না। দীর্ঘদিন যান চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটছে। তিনি সড়কটি সংস্কার ও ভাঙ্গা অংশ মেরামতের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, গত দুদিনে তিনি নিজে সড়কগুলো পরিদর্শন করেছেন। এ সড়কগুলোসহ উপজেলার আরও কয়েকটি সড়ক সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করে প্রায় তিন কোটি টাকার প্রকল্প তৈরী করে সোমবার উর্ধ্বতর কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছেন। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে।
সম্পাদনা : এএএম/এপি