দাগনভূঞার সবজি ক্ষেতের পোকা দমনে বিষমুক্ত ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সবজি চাষিদের মাঝে দিন দিন এ ফাঁদের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পদ্ধতিতে কীটনাশক ওষুধের ব্যবহার ছাড়াই কম খরচে ক্ষেতের কীটপতঙ্গ দমন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কুমডা জাতীয় ফসলের চাষে স্থানীয় চাষীরা ব্যাপক হারে ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ ব্যবহার করছেন।
পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের চিচিঙ্গা চাষী আবু তাহের বলেন, কুমডা জাতীয় ফসলের সবচাইতে ক্ষতিকর পোকা হল মাছি পোকা যা দমন করার জন্য অনেক কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় যার ফলে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। তেমনি পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈব সার ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছি। এখন খরচ কমেছে এবং পোকাও বেশি মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিষমুক্ত সবজিও খেতে পারছি সেই সাথে বিষমুক্ত সবজির চাহিদাও বাড়ছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, সেক্স ফেরোমন ফাঁদে স্ত্রী পোকার গন্ধযুক্ত একটি লিউর প্লাস্টিকের বয়ামে ব্যবহার করা হয়। চাষীরা যাকে তাবিজ বলে থাকেন। এ লিউরের গন্ধে পুরুষ পোকা ফাঁদের ভিতর প্রবেশ করে উড়াউড়ি করতে থাকে এবং প্লাস্টিকের বয়ামে বাঁধা পেয়ে পাখায় আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে যায়। বয়ামের নিচে যেহেতু সাবান গুড়া পানি ব্যবহার করা হয় তাই পোকা আর উড়তে পারে না এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাফিউল ইসলাম বলেন, কুমড়া জাতীয় সবজিতে মাছি পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়। স্ত্রী মাছি পোকা কচি সবজিতে অভিপজিটর ফুটিয়ে ভিতরে ডিম পাড়ে যা থেকে পরবর্তীতে কীড়া হয় এবং ফল পচে যায়। তাই এ পোকা দমনে বাইরে থেকে কীটনাশক স্প্রে করে খুব একটা কাজ হয় না। বরং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি পরিবেশে বিদ্যমান উপকারী পোকাও মারা যাচ্ছে। কুমড়া জাতীয় সবজির মাছি পোকা দমনের একটি কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ ব্যবহার করা।
তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত কীটনাশক পরিবেশের পাশাপাশি মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ মৌসুম শুরুর প্রথমেই চাষীদের জৈব সার ব্যবহার ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। চাষীদের মধ্যে পরিবেশ বান্ধব এ প্রযুক্তিটি আরও জনপ্রিয় করার জন্য রাজস্ব প্রকল্প ও ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ প্রজেক্ট এবং নোয়াখালী ফেনী লক্ষীপুর চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি প্রকল্প মাধ্যমে উক্ত উপজেলা চাষীদের মাঝে প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিনামূল্যে এ ফাঁদ বিতরণ করা হয়েছে।
সম্পাদনা : এএএম/এটি