ফেনী শহরতলীর মধ্যম চাড়িপুর ফেনী পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের তরূনদের নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শর্টফিল্ম (আব্দুল আজিজের জয় বাংলা) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। সম্প্রতি ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে Shamim The Dark World ইউটিউব চ্যানেলে শর্টফিল্মটি মুক্তি পায়। নির্মাতারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বর্ণিত গল্পে আব্দুল আজিজ চরিত্রে একটি শিশুকে দেখা গিয়েছে। যে সবসময়ই রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ খবর রাখলতো ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে আসতো৷ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হানাদার বাহিনীর কার্যকালাপ সম্পর্কে অবহিত করতো। একদা পানির পাত্র নিয়ে আঁকাবাকা ধানের ক্ষেতে হেঁটে বেড়ায় আজিজ আর গুন গুন করে বলতে থাকে-
জয় বাংলা.. বাংলার জয়
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়…
মুক্তিযোদ্ধাদের পানি পান করিয়ে ফেরারা পথে সে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর মুখে পড়ে যায় আজিজ। হানাদার বাহিনী তাকে বলে “এই লারকা ইদার আও…বোল পাকিস্তান জিন্দাবাদ”
যা আজিজ কখনোই বলতে চায় না কারন আজিজের স্কুল মাষ্টার বলেছেন, তুমি যে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করো ও তাদের খোঁজ খবর রাখো এই কারনে তুমি ও একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ আব্দুল আজিজ জানে একজন মুক্তিযোদ্ধা কখনোই “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” বলতে পারে না। আব্দুল আজিজ তার ডানহাত মুঠো করে আকাশের দিকে তুলল। গলা ফাটিয়ে, চিৎকার করে বলল, ‘জয় বাংলা’। সাথে সাথেই হানাদারদের নৃশংসতা শুরু হয়ে যায় ও গুলির বুলেটে ঝাজরা করে ফেলে বুক। আজিজের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকে বাংলা বুকে। বাংলার মাটি গভীর মমতায় গ্রহণ করল তার এক বীর সন্তানের মরদেহ।
সেদিন বাংলার আকাশ কেঁদেছিল আজিজের জন্য, হাওয়া আর গাছেরা কেঁদেছিল, মাঠের শস্যচারা আর রোদ কেঁদেছিল, মাটি আর নদী কেঁদেছিল। মানুষ কেঁদেছিল আজিজের জন্য।
শর্টফিল্মটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুক ও ইউটিউবে অনেকে আবেগময় মন্তব্য করেন। ইসরাত মৌ নামের একজন লিখেন আব্দুল আজিজের জয় বাংলা আমার দেখা অন্যতম সেরা ভিডিও-গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেলো। প্রকৃতি দেশপ্রেম ও দেশের ইতিহাসের বার্তা পৌঁছে যাক নতুন প্রজন্মের কাছে।
ফেনীর জনপ্রিয় কবি ও সাহিত্যিক মোজাম্মেল হোসেন বলেন
সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা উন্নত জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। সুস্থ সংস্কৃতি জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শর্টফিল্ম আবদুল আজিজের জয় বাংলা এককথায় অসাধারণ।ভিডিও টি দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধ এখনি মাত্র শুরু হচ্ছে। আমার ভীষণ ইচ্ছে করছে ঝাঁপিয়ে পড়ি রণাঙ্গনে। যারা অভিনয় করছে সকলকে ধন্যবাদ। শাহরিয়ার শামীম (নির্মাতা) ভালোবাসার এক নাম। তোমাদের হাত ধরে স্বপ্নের সোনার বাংলা উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে একদিন। স্বপ্ন দেখি।
শর্টফিল্মে অভিনয় করা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী (অবসরপ্রাপ্ত) এটিএম সিদ্দিক উল্ল্যাহ বলেন স্টোরি দেখে আমি অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলাম।
ছাত্র জীবনে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলে ও জীবন সায়াহ্নে এসে তরূনদের এমন ক্রিয়েটিভ কাজে উৎসাহ দেয়া ও নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে ধারনা দেয়াই আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল এবং সহকারী নির্মাতা আকবর হোসেন বলেন দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য যে জীবন দিতে পারে, সে প্রকৃত দেশ প্রেমিক। চলুন ঘুরে আসি ১৯৭১ সালে, চাইলেই কি তা সম্ভব? না সম্ভব না কিন্তু সম্ভব হয়েছে “আব্দুল আজিজের জয়বাংলা” নামক শর্টফিল্মের মাধ্যমে, প্রায় নয় মিনিটের শর্টফিল্মটি আপনাকে মনে করিয়ে দিবে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তি যুদ্ধের কথা। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোট্ট আব্দুল আজিজ কিভাবে নিজের দেশের জন্য জীবন দিয়েছিল,সম্পূর্ন একটা বাস্তব কাহিনীর প্রেক্ষিতে নির্মিত। তাই বলবো এমন লাখো আব্দুল আজিজ জীবন দিয়েছিলো বলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ। ভালো থাকুক তাঁরা ঐ পারে, আর এই দেশে থাকবেনা কোন দূর্নীতি, মাদকের ছড়াছড়ি, থাকবেনা কোন শকুনের কালো ছায়া আমরা এই স্বপ্ন দেখি। ভালোবাসি বাংলাদেশ।
এছাড়া নির্মাতা ইসমাইল হোসেন শামীম বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তবে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা এবং মুক্তিযুদ্ধের বই আমাদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বর্বর ঘটনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানায়৷ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন আমাদের শরীরকে এখনো উজ্জীবিত করে৷
আমাদের উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানান দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করা-ধারন করা। আমাদের এইসকল কাজে যারা উৎসাহ দিয়েছেন তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি৷
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি