নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফেনী জেলায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত করতে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। তিনদিন ধরে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ থাকায় এ জেলার ৫ শতাধিক নমুনা ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ৮ মার্চ দেশে করোনা শনাক্তের পর গত ১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মধুগ্রামে প্রথম এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হন। জেলায় করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের সংগৃহীত নমুনা শুরুর দিকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব
ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডিতে) পাঠানো হতো।
এরপর চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হতে থাকে। নমুনা জট তৈরি হওয়ায় নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের ল্যাব স্থাপন করা হয়। এ তিনটি পরীক্ষাগারে ফেনী জেলার ৫ হাজার ৭শ ১২ টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬ হাজার ১শ ২২টি। এর মধ্যে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬শ ৮৬ জন। সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেনসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪ জন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় মোট ১ হাজার ৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৪শ ১ জন, দাগনভূঞা উপজেলায় ২শ ১১ জন, সোনাগাজীতে ১শ ৭৮ জন, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১শ ১৯ জন, পরশুরামে ৫১ জন ও ফুলগাজীতে ৫৩ জন রয়েছেন। এছাড়া মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ জন, দাগনভূঞা উপজেলায় ৫ জন, সোনাগাজী উপজেলায় ৯ জন, পরশুরাম উপজেলায় ২ জন ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৩ জন রয়েছেন।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎপল দাশ জানান, নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের পরীক্ষাগারে নমুনাজট ও যন্ত্র মেরামতের কারণে গত তিনদিন কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। গত মাসেও একইভাবে ৬-৭দিন নমুনা পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এতে করে অনেককে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে ৮-১০টি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, নমুনা পরীক্ষা তিনদিন বন্ধ থাকার কারণে ৮০টি ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে নমুনা দেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে ধীরগতির কারণে তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তাদের পরীক্ষার ফলাফল কি হবে তা নিয়ে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরাও চরম দুচিন্তার মধ্যে রয়েছেন। দ্রুত পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলে তারা চিন্তা মুক্ত হবেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানববিদ আবু ইউসুফ বলেন, বুধবার থেকে নোয়াখালীর পিসিআর ল্যাবে যান্ত্রিক জটিলতায় পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শনিবার ৭০টি নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে। ল্যাবে ফেনীর ৫ শতাধিক নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ও করোনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সমন্বয়ক শরফুদ্দীন মাহমুদ বলেন, নোয়াখালীর পরীক্ষাগারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত কয়েকদিন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। শনিবার ঢাকা থেকে প্রকৌশলী এসে ল্যাবের যন্ত্রের মেরামত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছেন। যা দ্রুততার মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আশা করছেন দুই-একদিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ মাস্ক পরার জন্য আহবান জানান।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি