একজন দারোয়ান কতটা সুখে আর কতটা দুঃখে আছে সেটা আমরা তার জায়গায় নিজেকে উপস্থাপন করেই বুঝতে পারবো, ঠিক তেমনিই ডাক্তার, মুছি, দিনমজুর, দর্জি, সকল পেশার মানুষের ক্ষেত্রেই তার অবস্থানে নিজেকে রেখে চিন্তা করলেই ওনার অবস্থান সম্পর্কে অবগত কিছুটা হলেও থাকবেন। অনেকে আছেন এই বিষয় গুলো অনুভব না করেই নিজের ধারণা অনুযায়ী বলতে থাকে, যা আদৌ কতটুকু সত্য তা যাচাই করার কথাও তারা ভাবে না।
প্রথমত কারো বিষয়ে কিছু বলতে চাইলে বা তার পরিস্থিতি বুঝতে চাইলে, নিজেকে সে যে অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থানে বসিয়ে চিন্তা করবেন, আসলে কি আদৌ আমরা যা বলে পেলতেছি তাদের সম্পর্কে তা সত্য না মিথ্যা।
প্রবাসীদের বিষয়টাও সেইম কে, কখন, কি অবস্থানে, কিভাবে আছে, আগে জানার চেষ্টা করবেন, অহেতুক না জেনে কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন।
হুম এই বিষয় গুলো অনুভব ও তাদের অবস্থানে যারা আছে তাদের পাশে থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আমার পথচলা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি সময়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা আছে থাকবে ইনশা-আল্লাহ।
অনেক কিছুই শেখা হলো, অনেক কিছুই দেখলাম যা আসলে বলে আপনাদের বুঝানো সম্ভব হবে না বা বলে শেষ ও করা যাবে না, কেননা যতক্ষণ না আপনারা আপনাদের কে প্রবাসীদের অবস্থানে বসিয়ে না চিন্তা করবেন। আমরা আমাদের সুখ টা নিয়েই চিন্তা করি, কয়জনেই বা আমরা তাদের সুখের কথা চিন্তা করি?? আসুন তাদের বুঝি তাদের সাথে সুন্দর ভাবে আচরণ করি, হাসিমুখে কথা বলি এবং তাদের সাপোর্ট দিবো সব সময়, আমাদের একটু খেয়াল তাদের জন্য অনেক কিছু। তাদের ত্যাগ, কষ্ট একমাত্র তারাই জানে, প্রতিনিয়ত এই কষ্ট গুলো তাদের আঘাত করে যায়, এরপরও তারা হাসিমুখে পরিবারকে বলে আমি ভালো আছি।
আমি মনে করি আমাদের উচিত তাদের জন্য কিছু করা, তাদের চিত্র তুলে দরা। হুম, তাদের এই পথচলা তুলে দরতেই আমার প্রবাসে আসা, অনেকের অনেক ইচ্ছে থাকে, আমার ইচ্ছে গুলো সব সময়ই সবার থেকে ভিন্ন থাকে, আর আমি আমার প্রচেষ্টায় আমার ইচ্ছে গুলো কে পূরণ করতে ভালোবাসি, সে অনুযায়ী কাজ করে যাই।
আমার আব্বু অনেক বছর দেশের বাইরে আমাদের সুখের জন্যেই তার প্রবাস জীবন শুরু করতে হয়। আমার চারদিক বুঝার বয়স হওয়ার পর আমার মাঝে প্রবাস জীবন কি, তা কেমন, কেনো আব্বু পরিবার পরিজন ছাড়া এত দূরে, আদৌ কি আমরা বুঝি? আমার মাঝে এই বিষয় টা প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায়। তাই আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম প্রবাস পাড়ি দিবো, আর প্রবাস জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। আমার আব্বু আমাকে মানা করছিলো প্রথম থেকে কারণ তিনি ত জানে আসলে প্রবাস মানে কি। তারা ত জানে না আমার যাওয়ার উদ্দেশ্য কি। আলহামদুলিল্লাহ, যতটুকু দেখলাম, যতটুকু শিক্ষা নিলাম এসে তা দেশে থেকে আমি কখনোই এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতাম না।
হুম কর্মসংস্থান টা আমরা চাইলে পরিবারের পাশে থেকে করতে পারি তবে প্রয়োজন পরিবারের সাপোর্ট, কেননা এই সাপোর্ট এ-ই পারে আমাদের সফল করে তুলতে।
আর একটু চিন্তা করি আমরা, প্রবাস থেকে টাকা পাঠায়, আমরা ভালো মন্দ খাবার খাই, পোশাক কিনি, ঘুরতে যাই এই আনন্দের তৃপ্তি নেই, যদি সে টাকা দেশেই কিছু করে একসাথে ভালো খাবার কিংবা ভালো পোশাকে নয় তারপরও বসে সবাই মিলে কিছু খাওয়ার যে আনন্দ এর চেয়ে বেশি আর কিছুই হতে পারে না।
প্রয়োজন আমাদের একটু চিন্তা, মন মানসিকতা। প্রবাসী মানে রাতের অন্ধকারে বালিশে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করা। প্রবাসী মানে না খেয়ে, অল্প খেয়ে পরিবারের জন্য টাকা আয় করা।
আমি দেখেছি তাদের হার না মানা অক্লান্ত পরিশ্রমে ও মুখে হাসি, কারণ এই হাসিতে তাদের পরিবার হাসে। আমরা তাদের কাছে চাওয়া পাওয়ার হিসাব করি, কখনো তাদের বুঝতে পারার হিসেব করি না। আমরা তাদের কাছে আবদার করতেই থাকি আর তারা সেই আবদার মিটানোর জন্যেই ঝড়-বৃষ্টি, গরমেও কাজ করে যায়।
এই প্রবাস কেঁড়ে নে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় ও প্রিয়জনের মৃত্যু, অসুস্থ হলে কিছুই করা থাকে না তখন তাদের, দূরে পড়ে থেকে শুধু কান্না করতে হয়, যদি তারা দেশেই পরিবারের সাপোর্টে কিছু করতো হোক সেটা স্বল্প আয়ের কিছু তাও ত প্রিয়জনের অসুস্থতার সময় পাশে থাকতে পারছে, মৃত্যুর সময় তার শেষ দেখা জানাজার নামাজে ও অংশগ্রহণ করতে পারছে।
আমি একটি কথাই বলবো পরিবারের পাশে থেকে স্বল্প আয়ের কিছু করে সহজ সরল জীবনযাপন করুন, করি। এতে পরিবারের পাশে থেকে সুখ দুঃখ সবাই ভাগাভাগি করে থাকতে পারাই আনন্দের।
পরিশেষে আমি আমাদের দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো আমাদের দেশেই এমন অনেক জায়গা আছে সেখানে শিল্প কারখানা তৈরি করার পরিকল্পনা করুন এতে করে দেশের মানুষ দেশেই কিছু করতে পারবে। দেশেই কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা থাকলে তাদের বিদেশ যাওয়া লাগবে না।