ফেনীর সোনাগাজীতে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে চর ছান্দিয়া ইউনিয়নের মো. আব্দুল্লাহ নামের কৃষকের ভুমি অধিগ্রহনের ১৬ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎতের মামলায় প্রতারক আব্দুল খালেককে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত।
বাদীর আইনজীবী নুরুল আমিন জানায়, সোমাবার দুপুরে খালেক আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক দ্রুব জৌতি পাল আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে প্রেরনের আদেশ দেন। খালেক সোনাগাজী পৌরসভার পাঁচ নং ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের ছৈয়দ আহমদের ছেলে। এলাকায় সে চিহিৃত প্রতারক হিসেবে পরিচিত।
এর আগে কৃষক আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে চলতি বছরের ৪ জুলাই ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ভূমি অধিগ্রহনের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎতের অভিযোগে নালিশি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি সোনাগাজী পৌরসভার পাঁচ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল খালেক, গোলাম আজম ও সিরাজুল ইসলামকে আসামী করেন।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৮৮ সালের ১৪ এপ্রিল আসামী আব্দুল খালেক দলিল নং ৩৪৩৭, ৩৪৩৮ মূলে জনৈক রেজিয়া আক্তার ও আবুল হাসেমের নিকট ১৭৮ শতক ভূমি বিক্রয় করেন। পরে ক্রেতা আবুল হাসেম ১৯৯০ সালের ৩১ জানুয়ারী তারিখে সাব রেজিষ্ট্রিকৃত ৭৬৬ দলিলমূলে অপর ক্রেতা রেজিয়া আক্তারের নিকট তার অংশের ৮৯ শতক ভূমি বিক্রয় করেন। রেজিয়া আক্তার ১৭৮ শতক ভূমি একক মালিকানা দাবীদার থাকিয়া উচিতমূল্য গ্রহন করে সাব রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল মূলে মামলার বাদী মো. আব্দুল্লাহর কাছে বিক্রয় করেন। উক্ত তফসিল ভূমি সরকার বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কেইস নং-০৩/১৫-১৬ মূলে অধিগ্রহন করেন। তফসিল ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র ও খতিয়ানাদি মামলার এক নাম্বার আসামী আব্দুল খালেকের নামে থাকায় অধিগ্রহনের টাকা উত্তোলন করতে বর্তমান মালিক মামলার বাদী মো. আব্দুল্লাহ আইনী জটিলতায় পড়েন। স্থানীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমোক্তারনামা দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার শর্তে বাদী আব্দুল্লাহ অধিগ্রহনের টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা আসামী আব্দুল খালেককে দেওয়ার লিখিত চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী বাদী আব্দুল্লাহ জনতা ব্যাংক সোনাগাজী শাখায় আসামীর একাউন্টে আড়াই লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু জাল জালিয়তি ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে আমোক্তারনামা গোপন করে আসামী আব্দুল খালেক ও অপর দুই আসামী পরস্পরের যোগসাজসে ফেনী এল.এম অফিস থেকে গত ১৮ সালের ২৫ জুন ০৩৭৬৫০৯ নাম্বার চেকে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। পরবর্তীতে বাদী ফেনী এল.এম অফিসে গিয়ে জালিয়তির মাধ্যমে তার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করার খবর জানতে পেরে আসামী আব্দুল খালেকের কাছে টাকা ফেরত চায়। বিভিন্ন সময় টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করলেও একপর্য়ায়ে টাকা চাইলে প্রাননাশের হুমকি দেয়।
আদালতের বিচারক জাকির হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফেনীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আদালতের আদেশ পেয়ে উপ-পরিদর্শক আবুল খায়েরকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি তদন্ত করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর আব্দুল খালেককে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত ১২ নভেম্বর আদালত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বাদী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ফেনী ভূমি অধিগ্রহন শাখার অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আসামীরা আমার টাকা উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে টাকা উদ্ধার করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি। তিনি আরো বলেন, আসামী আব্দুল খালেক এলাকার চিহিৃত প্রতারক। সে এলাকার আরো কয়েক ব্যক্তির ভূমি অধিগ্রহনের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাত করেছে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি