খানা খন্দে ভরা ফেনী-সোনাইমুড়ি আঞ্চলিক সড়কের তেমুহনী থেকে গনিপুর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। সড়কের বেশির ভাগ অংশের পিচ পাথর উঠে গিয়ে সুড়কি বালু বেরিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির তেমুহনী থেকে বোর্ড অফিস পর্যন্ত অংশে বড় বড় গর্তের ফলে ডোবায় পরিণত হয়েছে, যান চলাচল বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় সময় যানবাহন অকেজো হয়ে পড়ে। কিছু যানবাহন বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলাচল করে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহিপালে ফ্লাইওভার তৈরির সময় সড়কটির পাশে তেমুহনীতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লি. অস্থায়ীভাবে মালামাল রাখার জন্য ডিপো করা হয়। ওই সময় ফ্লাইওভার তৈরির জন্য ব্যবহৃত মালামালসহ ভারী যানবাহন চলাচলে সড়কটি অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় লোকজনকে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষে সড়কটির সংস্কার করে দিবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলে সড়কটি সংস্কার না করেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লি. তাদের মালামাল নিয়ে চলে গেছে। এতে করে ওই সড়কে চলাচলকারী ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলসহ নোয়াখালী-সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, নাঙ্গলকোর্ট উপজেলার যাত্রী সাধারণ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। একপর্যায়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ফেনীর পক্ষ থেকে ঈদের আগে বড় গর্তে গোটা ইট বসিয়ে দেয়। এতে সাময়িক দুর্ভোগ কমলেও বর্তমানে ইট সরে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে একাকার। বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে। সংস্কার না হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে ডোবার রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন এসব ডোবায় যানবাহন আটকা পড়ে গাড়িগুলো অকেজো হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের অধিকাংশ স্থানে বিটুমিন ও সুড়কি উঠে গেছে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও কাশিমপুর জামে মসজিদের পূর্ব পাশের সড়কটি (মিজি বাড়ি সংলগ্ন স্থানে) একাংশ ভেঙ্গে পুকুরে পড়ে গেছে। সড়কের তেমুহানী, বড় মিয়ার দোকান, বক্তারপুর, জয়নারায়নপুর, মোল্লাঘাটা, গনিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার সুড়কি উঠে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে রিক্সা চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ী জহিরুল হক মিলন জানান, সড়কটি যান চলাচলের অনুপোযাগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প পথ না থাকায় সড়কে চলাচলকারীদের বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করছে। এছাড়া রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ওই সড়কে যাতায়াতকারী মাহবুবুল হক জানান, সড়কটি মেরামত করা হয়েছে বেশিদিন হয়নি। কিন্তু নিম্মমানের কাজ করায় কিছুদিন না যেতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
সিএনজি চালক আবু তাহের বলেন, সড়কটির তেমুহনী অংশে বেশি খারাপ হওয়ায় দিনের বেলায় অনেকেই বিকল্প পথে গাড়ি চালাই। ঘুর পথে অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে যায় আবার অনেকে যেতে চায় না।
শহিদুল ইসলাম নামে অপর এক গাড়ি চালক জানায়, চলাচলে অনুপযোগী সড়কে গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে লোকসান গুনতে হয় এবং শারীরিকভাবেও ব্যথা বেদনার কারণে গাড়ি চালাতে তেমন আগ্রহ থাকে না।
ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, রাস্তার সমস্যার কারণে হাসপাতালে যেতে অসুস্থ্য রোগী আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। রাতে জরুরী প্রসূতি রোগীকে নিয়ে শহরে যাওয়াতো দূরে থাক গাড়িও মেলেনা।
ফেনী পশ্চিমাঞ্চল কমিউনিটির সভাপতি আলহাজ¦ আবুল কাশেম বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই গাড়ি চলাচলতো দুরের কথা রাস্তায় হাঁটা যায় না। রাস্তা ভেঙ্গে ডোবা হয়ে যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের নজর নেই। শুকনার দিনে যেমন তেমন, বর্ষায় অবস্থা আরও খারাপ হয়। তিনি জানান, সড়কটি দ্রুত মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।
ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসাইন বলেন, সড়কটির ৬ কিলোমিটার মেরামতের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বরাদ্ধ পেলেই দরপত্র আহবান করা হবে।
সম্পাদনা : এএএম/এসকে