ফেনীতে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর পাকাকরণ শুরু হলেও এখনো অনেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরই শনাক্ত করা যায়নি। জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় দুইজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর সীমান্তের শুণ্যলাইন বরাবর হওয়ায় তাদের কবর পাকাকরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ফেনীর গণপূর্ত বিভাগ সুত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ফেনী জেলায় ৫২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম ঠিকানা পাঠানো হয়। কিন্তু স্থানীয় ভাবে খোঁজখবর করে ৩১ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২১ জনের কবরের সন্ধান স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও পাওয়া যায়নি। মন্ত্রনালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৫২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ফেনী সদর ১৬ জনের মধ্যে ৮ জনের, পরশুরাম উপজেলায় ১১ জনের মধ্যে ৪ জনের, ফুলগাজী উপজেলায় ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৪ জনের মধ্যে ১ জনের, সোনাগাজী উপজেলায় ৭ জনের মধ্যে ২ জনের এবং দাগনভূঞা উপজেলায় ৪ জনের মধ্যে ২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী জানায়, ফেনীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি পাকাকরণ প্রকল্পের আওতায় ৩১ টি কবর পাকাকরণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে রয়েছে। এ গুলির মধ্যে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী ও দাগনভূঞার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর পাকাকরণের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় এবং গত ফেব্রুয়ারিতে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ফেনী সদর উপজেলার কবর সমুহ করার জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ঠিকাদার নিয়োগ ও কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারগণ ইতিমধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন। কোন কোনটিতে শুধু নামফলক লাগানোর কাজ বাকী রয়েছে। প্রতিটি সমাধি পাকাকরণের জন্য গড়ে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা করে ধরা হয়েছে।
ফেনী পৌরসভার পশ্চিম উকিল পাড়ার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক মজুমদারের ভাগিনা আরিফ জাহান জানান, স্বাধীনতার প্রায় অর্ধ শতাব্দি পর হলেও সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলি পাকাকরণ করায় তারা বেশ খুশী হয়েছেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল মোতালেব জানান, সরকারের এ উদ্যোগ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করেছে। তিনি আশা করেন, যে সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর শনাক্ত করা যায়নি তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেও যে কোন ধরনের স্মৃতিফলক করা যায় কিনা সেটাও দেখতে হবে।
ঠিকাদার মো. ইব্রাহিম জানায়, তিনি জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার মোট ১৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর পাকাকরণের কাজ পেয়েছেন। ১২টির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু ফুলগাজী উপজেলার গাবতলী গ্রামে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় সমাহিত দুজন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি নির্মান কাজ ৫০ শতাংশ হওয়ার পর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর (বিএসএফ) বাধার কারনে বন্ধ রয়েছে। ওই দুইজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন- ফুলগাজীর দক্ষিন আনন্দপুর গ্রামের শহীদ আইয়ুব আলী ও নিলক্ষী গ্রামের শহীদ সিরাজুল হক। তিনি অভিযোগ করেন, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও ঠিকাদারকে এযাবত কোন বিল প্রদান করা হয়নি।
ফেনী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শা‘দ মোহাম্মদ আন্দালিব জানান, যে সব শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর শনাক্ত হয়েছে সেগুলির কাজ ৮০-৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে মন্ত্রনালয় থেকে এখনো অর্থ ছাড় করা হয়নি। ফলে ঠিকাদারদের কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি