ফেনীর বেসরকারী হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে লাগামহীন ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র ফি আদায়ের ফলে রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। লাগামহীন ফি আদায় যেন দেখার কেউ নেই। দায়ে পড়ে ভিজিট পরিশোধ করতে বাধ্য হন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সরেজমিন বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, ডা. আক্তার হোসেন চৌধুরীর ব্যবস্থাপত্র ফি নিয়ে রোগীদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাকবিতন্ডা হয়। এনিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসে ৫শ টাকা কমিয়ে নেন। চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আক্তার হোসেন চৌধুরী। চেম্বার করেন শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের জেড ইউ মডেল হাসপাতালের একটি কক্ষে। প্রথমদিকে কিছুদিন এক হাজার টাকা ব্যবস্থাপত্র ফি নিলেও পরবর্তীতে প্রথমবার দুই হাজার, দ্বিতীয়বার এক হাজার ৫শ টাকা ও তৃতীয় বার এক হাজার টাকা আদায় করেন। রিপোর্ট দেখতে আদায় করেন ৫শ টাকা। শুধু তিনিই নন, এ চিত্র শহরের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করা বেশ কয়েকজন ডাক্তার লাগামহীন ব্যবস্থাপত্র ফি আদায় করছেন। দায়ে পড়ে ব্যবস্থাপত্র ফি পরিশোধ করতে বাধ্য হন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
শহরের আল-বারাকা হাসপাতালে প্রতিদিন বিকালে চেম্বার করেন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আজিজ উল্লাহ। তার চেম্বারে একেক ধরনের রোগীর কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থাপত্র ফি আদায় করা হয়। পাইলস, ফিস্টুলা, অর্শ্ব রোগীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা, পেটে ব্যথা সহ অন্যান্য রোগীর কাছ থেকে ৭শ টাকা, দ্বিতীয়বার ৫শ টাকা আদায় করা হয়। একই হাসপাতালে নিউরোমেডিসিন বিশেসজ্ঞ ডা. নাজমুল হক মুন্নাও একই ব্যবস্থাপত্র ফি আদায় করেন।
আল-কেমী হাসপাতালে মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন প্রথমবার ৭শ, দ্বিতীয়বার ৫শ ও রিপোর্ট দেখাতে ৩শ টাকা আদায় করেন। কনসেপ্ট হাসপাতালে বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. তসলিম উদ্দিন প্রথম ভিজিট নেন ৮শ ও দ্বিতীয় ভিজিট ৫শ টাকা। স্বল্প সময় কিংবা এক মিনিটের ব্যবধানে একাধিক রোগী দেখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিসিন ও গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মতলেবুর রহমান প্রথম ব্যবস্থাপত্র ফি ৭শ ও দ্বিতীয়বার ৫শ টাকা আদায় করেন। রিপোর্ট দেখতে আদায় করেন ৪শ টাকা। একই সেন্টারে চেম্বার করেন মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মজিবুর রহমান মিয়াজী। তিনি প্রথমবার ৬শ, দ্বিতীয়বার ৩শ এবং রিপোর্ট দেখাতে ৩শ টাকা আদায় করেন।
ফেনী ক্লিনিকে চেম্বার করেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্ত সাহা প্রথমবার ৭শ ও দ্বিতীয়বার ৫শ টাকা ব্যবস্থাপত্র ফি আদায় করেন।
সাইকা হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস সুলতানা প্রথমবার ৭শ ও দ্বিতীয়বার ৫শ টাকা আদায় করেন। প্যাসেফিক হেলথ কেয়ারে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সায়েরা শরিফা শিল্পী প্রথমবার ৭শ ও পরবর্তী সবসময়ে ৫শ টাকা, ই-স্কয়ার ল্যাভে হাড়-ভাঙ্গা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবদুল কাদের প্রথমবার ৮শ ও দ্বিতীয়বার ৬শ টাকা, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান প্রথমবার ৭শ, দ্বিতীয়বার রোগী সহ ৫শ ও রিপোর্ট দেখতে আদায় করেন ৩শ টাকা।
জানা গেছে, ডাক্তাররা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো ব্যবস্থাপত্র ফি আদায় করলেও রোগী ও স্বজনরা দায়ে পড়ে কিছু বলতে সাহস করেনা। এছাড়া কমিশনের লোভে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হয়। এনিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উন্নয়ন সভায় ডাক্তারদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপত্র ফি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামানের ঘোষণায় সর্বসাধারণ আশাবাদী হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখনো হতাশা কাটেনি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) ফেনী জেলা শাখার সভাপতি ডা. সাহেদুল ইসলাম ভূঞা কাওসার বলেন, ডাক্তাররা বিবেকবোধ থেকে পরিচালিত হয়ে সহনীয় ব্যবস্থাপত্র ফি নেবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা।
ফেনী জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশিদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সিভিল সার্জন ও বিএমএকে অবহিত করেছি। এনিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। ১০ জন নয়, সমাজের ৯০ জনের কথা চিন্তা করে সহনীয় ফি আদায় করলে মানুষ উপকৃত হবে।
সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র ফি না বাড়াতে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবকটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি কাজ করছে।
সম্পাদনা : এএএম/এটি