আজ

  • শনিবার
  • ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে মিললো নতুন ফুল ‘ফুটকি’

  • ফেনী ট্রিবিউন ডেস্ক
  • ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার চম্পকনগর গ্রামে ফুলের নতুন একটি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে করে দেশের ৩ হাজার ৮৩০ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে আরও একটি নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। নতুন পাওয়া এই ফুলের কাছাকাছি একটি জাত হচ্ছে ‘ফুটকি’ বা ‘দাঁতরাঙা’। ফুটকির ফুলের রং বেগুনি, এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু নতুন দেখা পাওয়া ফুলটি ফুটকির মতো দেখতে হলেও এর রং সাদা।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. জসিমউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ নতুন উদ্ভিদ আবিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, এর বাংলা নামকরণ করা হয়নি। তবে ‘সাদা ফুটকি’ বলা যেতে পারে। গত বছরের ২ জুন অধ্যাপক জসিমউদ্দিন ও তার দল ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার চম্পকনগর গ্রামে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদের ওপরে একটি জরিপ করতে। সেখানেই এই ফুল তাঁর চোখে পড়ে। তার মনে পড়ে, ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ হুকারস তার ফ্লোরা অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া বইতে এই ফুলের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বলেছিলেন, এটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, বাংলা অঞ্চলের পূর্ব দিকেও এটি দেখা গেছে।

    কিন্তু সাদা রঙের ফুটকি ঠিক কোথায় কোন এলাকায় দেখা গেছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে হুকারস উল্লেখ করে যাননি। অনেকে বিভিন্ন সময় সিলেটের রেমা কালেঙ্গা বনসহ বিভিন্ন স্থানে ওই ফুল দেখেছেন দাবি করলেও তারা তার কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। কেউ এর কোনো নমুনা বা ফুল বা ফলও নিয়ে এসে পরীক্ষা করেও নিশ্চিত করতে পারেননি।

    অধ্যাপক জসিমউদ্দিন ও তার দল ওই ফুল দেখার পর এর ফল ও ফুল সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, এটিই হুকারসের উল্লেখ করা সেই ফুলের গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ম্যালাস্টমা ইমব্রিকেটাম ওয়ালি এক্স ট্রিয়ানা। ওই ফুলের ওপরে একটি গবেষণা প্রবন্ধ গত নভেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব প্ল্যান্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টে প্রকাশ করছেন তিনি।

    অধ্যাপক জসিমউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যে স্থানটিতে ফুলের ওই গাছটি পেয়েছি, তা ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের খুব কাছে। সেখানে আরও অনুসন্ধান চালালে অনেক নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যাবে।’

    ফেনী এলাকার স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস, ওই ফুলের গাছের পাতা ও ফল পেট খারাপ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যার ওষুধ হিসেবে ভালো কাজে দেয়। স্থানীয় লোকজন তা ব্যবহার করে সুফলও পেয়েছেন। অধ্যাপক জসিমউদ্দিন স্থানীয় কয়েকজনকে ওই ফুলের গাছটি সংরক্ষণের জন্য দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন।

    গবেষক দলটি জানায়, ওই উদ্ভিদ কিছুটা গুল্মজাতীয়। এর পাতা অনেকটা তেজপাতার মতো। স্থানীয় লোকজন ওষুধসহ নানা কাজে ওই পাতা ব্যবহার করে থাকেন। সাধারণত পাহাড়ি ঝরনার নিচে ও বনভূমির প্রান্তীয় এলাকায় এরা বেশি জন্মায়। ফলে এটি দেশের পার্বত্য জেলাগুলোতেও দেখা যেতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় হারবেরিয়ামের পরিচালক পরিমল সিংহ বলেন, ‘বাংলাদেশে উদ্ভিদের তালিকায় নতুন একটি প্রজাতি যুক্ত হলো, এটা খুবই খুশির সংবাদ। এখন আমাদের উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৮৩১। নতুন পাওয়া এই ফুলের গাছটির কোনো ঔষধি গুণ আছে কি না, তা আমরা আরও অনুসন্ধান করে দেখব।’

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090