ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নে সম্পত্তি বিরোধের জেরে একই পরিবারের তিনজনকে পিঠিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষরা। গতকাল বিকেলে ইউনিয়নের ধোনসাহাদ্দা গ্রামের ছমদ আলী হাজী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন তাদের বাড়িতে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। বহুবার সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয় না। এভাবেই অমিমাংসিত থেকে যায়। সর্বশেষ গতকাল বিকেলে একই বাড়ির প্রতিবেশি মৃত আনিছুল হকের ছেলে রেজাউল হক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই বাড়ির বাসিন্দা (পূর্বে থেকে অসুস্থ) শাহ আলমের গায়ে ইট মেরে আঘাত করলে পরে তিনি মাটিতে লুটে পড়েন। স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রী জয়নব বিবি এগিয়ে আসলে তার মাথায়ও ইট দিয়ে থেতলে দেয় রেজাউল। তখন জয়নব বিবিও মাটিতে লুটে পড়ে। স্বামী বাড়ি থেকে আসা মেঝ মেয়ে নাঈমা আক্তার এর প্রতিবাদ করলে তাকেও মাথায় আঘাত করে। পরে রেজাউল হকের নেতৃত্বে সাইফুল ইসলাম,মুন্নি বেগম, সাইমা সুলাতানা রিয়া ও লাকি আক্তার সহ এরা সবাই হাতে লাঠি, দামা, খন্তা ও ছুরি নিয়ে শাহ আলমের ঘরে প্রবেশ করে তাদের উপর অতির্কিত হামলা চালিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরে বাড়ির প্রতিবেশি ও স্থানীয় লোকজন এসে আহতদের উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রধান করেন এবং শাহ আলমের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে আহত শাহ আলম ও তার স্ত্রী জয়নব বিবি ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত জয়নব বিবি বলেন, আমি বিকেলে আছরের নামাজ পড়ে আমাদের ঘরের সামনে দিয়ে মাটি ভর্তি বস্তা দিচ্ছিলাম। তখন রেজাউল হক আমাকে জোর গলায় বলে তুই কার জায়গায় বস্তা দিছত। তখন আমি বললাম আমাদের জায়গায় আমরা বস্তা দিচ্ছি। তখন রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে সামনে এগিয়ে এসে আমার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করলে আমার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। তারপর আমার মেয়ে তার অসুস্থ পিতাকে দেখতে এসেছিল তাকেও মাথায় আঘাত করে জখম করে। আমার অসুস্থ স্বামী এসব দৃশ্য দেখে প্রতিবাদ করলে তাকে ঘরের ভিতর ডুকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি ও লাথি মেরে মারাত্মক জখম করে। তখন আমাদেরকে আশপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে আমার স্বামী জীবন মৃত্যুর প্রহর গুণছে। তাকে ডাক্তার ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পরামর্শ দেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।
স্থানীয় লোকজন জানান, ছমদ আলী হাজী বাড়িতে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। অনেকবার সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সুরহা হয়নি। তবে গতকালকের ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। ওই বাড়ির বাসিন্দা শাহ আলম দীর্ঘদিন অসুস্থ। তিনি ঠিকমত চলাফেরা ও কথা বলতে পারে না। এক প্রকার ঘরেই কাটছে তার দিন। তার একমাত্র ছেলে প্রবাসে থাকে, ঘরে তারা স্বামী স্ত্রী দুজন বসবাস করছে। এরই সুযোগে একই বাড়ির বাসিন্দা রেজাউল হক সহ তার পরিবারের সদস্যরা শাহ আলমের পরিবারের উপর হামলা চালায়।
তারা বলেন, জায়গা সম্পত্তি নিয়ে রেজাউল হকের সাথে বাড়ির আরো অনেক পরিবারের বিরোধ রয়েছে। এলাকার সমাজ এবং ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের নির্দেশ মানেন না তারা। তবে রেজাউল বেশি উগ্রপন্থি স্বভাবের। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির মধ্যে মানুষকে মানুষ বলে মনে করেন না। এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান তারা।
প্রতিপক্ষের অভিযুক্ত রেজাউল হক বলেন, তার ক্রয়কৃত কিছু জায়গা চাচা শাহ আলম মাটিভর্তি বস্তা দিয়ে দখল করে রেখেছে। তিনি গতকাল এর প্রতিবাদ করলে তার চাচা শাহ আলম তার মাথায় ইট মেরে ফাটিয়ে দেয়। তিনি স্বীকার করেন তার হাতে থাকা ইটের আঘাতে তার চাচি জয়নব বিবির মাথা ফেটে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে স্হানীয় ইউপি সদস্য সুমনকে বারবার ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে গতকাল রাতে আহতরা ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতাল হতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করে ফেনী মডেল থানায় অভিযোগ নিয়ে যায়।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগের বিষয়টি দেখে তদন্তের জন্য বালিগাঁও ইউনিয়নে নিয়োজিত বিট পুলিশের ইনচার্জ এস আই রতনকে দায়িত্ব দেন।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি