একজন মুসলিমের সর্বোত্তম নাম কী হবে, কোন ধরনের নাম প্রশংসনীয়, কোন ধরনের নাম বৈধ বা অপছন্দনীয়, ইসলাম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
নাম হলো পরিচয় ও নিদর্শন। নামের আরবি হলো ‘ইসম’। ইসম অর্থ চিহ্ন, আলামত, পরিচিতি, লক্ষণ, উন্নয়ন, বর্ধন, সম্মান, সুনাম, যশ, খ্যাতি ইত্যাদি।
মানুষ দুনিয়ায় আসার পর প্রথম যা লাভ করে তা হলো তার নাম-পরিচয়। মৃত্যুর পরেও মানুষের নাম বেঁচে থাকে। তাই শিশুর সুন্দর নাম তার জন্মগত অধিকার।
শিশুর নাম রাখার অধিকারী হলেন প্রথমত মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাই-বোন, ফুফু-খালা, চাচা-মামা ও আত্মীয়-স্বজন।
নাম যেন অর্থবহ হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। যে কেউ নামের প্রস্তাব বা পরামর্শ দিতে পারে। অভিজ্ঞ আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তি প্রস্তাবিত নামের অর্থ, গুণাগুণ ও তাৎপর্য অনুসারে এর প্রাধান্য ব্যাখ্যা করবেন। সন্তানের অভিভাবকরা নাম গ্রহণে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ইসলামে সুন্দর ও ভালো নাম রাখার গুরুত্ব অনেক। তাই তো দেখা যায়, রাসূল (সা.) নিজেই অনেক বাচ্চার নাম রেখেছেন এবং কারো অসুন্দর নাম শুনলে তা পরিবর্তন করে দিতেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, ‘কেয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার নিজের নাম ও পিতার নামসহ ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৯)।
তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখা উত্তম-
> আল্লাহ তায়ালার কোনো নামের সঙ্গে ‘আব্দ’ যোগ করে নাম রাখা যেমন, আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান। হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় নাম আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২১৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২২৯১০)।
> কোনো নবীর নামে নাম রাখা, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নবীদের নামে নাম রাখ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৯০৩২, আরো দ্রষ্টব্য আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৮৩৬-৮৪০)।
> সাহাবী-তাবেয়ী কিংবা কোনো নেককার বুযুর্গের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা। এক হাদিসে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তাদের (হাসান, হুসাইন ও মুহাসসিনের) নাম রেখেছি হজরত হারুন আলাইহিস সালামের সন্তানদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৯৫৩)।
> নামের প্রভাব ব্যক্তির মাঝে প্রতিফলিত হওয়ার বিষয়টিও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ( সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৯১৭)।
এগুলো হচ্ছে উত্তম নাম রাখার কিছু মূলনীতি। এছাড়াও যে কোনো ভালো অর্থের সুন্দর নামও রাখা জায়েয এবং তা আরবি ছাড়া অন্য ভাষায়ও হতে পারে।
মা-বাবার নামের সঙ্গে মিল রাখা:
সন্তানের নাম মা বা বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা জরুরি নয়। একইভাবে জরুরি নয় ছেলের নামের সঙ্গে বাবার নাম ও মেয়ের নামের সঙ্গে মায়ের নাম অথবা তার বিপরীত উল্লেখ করা। অর্থাৎ মা-বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়, নামটি সুন্দর হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ।
জন্মনিবন্ধন:
শিশুর নামকরণের পর তার জন্মনিবন্ধন করা উচিত। এতে তার নাগরিক অধিকার ও জাতীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত হয়। চিকিৎসাসেবা, শিক্ষালাভ ও আন্তর্জাতিক পরিষেবাগুলো প্রাপ্তির পথ সুগম হয়। ভবিষ্যতে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আইনগত ক্ষেত্রে সুবিধা গ্রহণ করা সহজ হয় এবং জটিলতামুক্ত হওয়া যায়।
সঠিকভাবে নাম লেখা উচিত:
প্রথম স্কুল বা বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিশুর নাম ও মা-বাবার নাম সঠিকভাবে লেখা উচিত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্ব বেশি।
জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস বা কর্মক্ষেত্রসহ সর্বত্র সঠিক নাম পূর্ণরূপে লেখা কর্তব্য। তা না হলে নানা সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ফেনী ট্রিবিউন/ এএএ্ম/আরএজে