ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তিন বছর পার হলেও আসামিদের সাজা কার্যকর হয়নি।
ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রায়ে ৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছিল। তবে কোভিড ১৯-এর কারণে এক বছর ধরে হাইকোর্টে আসামিদের আপিলের শুনানি হয়নি। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৫ জন এখনো পলাতক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের জি এ একাডেমি এলাকায় প্রকাশ্যে একরামুল হকের গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামির মধ্যে ৭ জন কখনোই ধরা পড়েননি বলে পুলিশ ও আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৮ আসামি জামিন নিয়ে পলাতক। দণ্ডপ্রাপ্ত ২৪ জন এখনো কারাগারে রয়েছেন।
এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ফুলগাজী উপজেলার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুল্লাহিল মাহমুদ ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিনের ছেলে আবিদুল ইসলাম।
এঁদের মধ্যে লায়লা জেসমিনের ছেলে আবিদুল ইসলাম রায় ঘোষণার আগেই জামিন নিয়ে পালিয়েছেন। তিনি ছাড়া জামিন নিয়ে পলাতক এমরান হোসেন, জাহিদুল হাসেম, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিস উদ্দিন, জিয়াউর রহমান, নুরুল আবছার ওরফে জাহিদ চৌধুরী, আরমান হোসেন ও জসিম উদ্দিন।
মামলার আট আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। সাত আসামি এখনো ধরা পড়েননি। আসামিদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন, কফিল উদ্দিন মাহমুদ, টিটু, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফসহ সাতজন হত্যাকাণ্ডের পর এখনো গ্রেপ্তার হননি।
মামলায় বিএনপির নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলম ছাড়াও ১৬ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, একরামকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তাঁর ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৫৬ জন আসামির মধ্যে ১৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
ফেনী জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ বলেন, গত এক বছর কোভিড-১৯-এর কারণে এই মামলার আসামিদের আপিল শুনানিই হয়নি। ফলে ডেথ রেফারেন্সও পিছিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে দণ্ডাদেশ কার্যকর বিলম্বিত হচ্ছে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি