আজ

  • মঙ্গলবার
  • ২৮শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সোনাগাজীতে অপহরণের তিনমাস পর গৃহবধূ উদ্ধার, অস্ত্র ঠেকিয়ে গর্ভের সন্তান মেরে ফেলার অভিযোগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • ফেনীর সোনাগাজীতে অপহরণের তিনমাস পাঁচদিন পর ধর্ষণ মামলার বাদী এক প্রবাসীর স্ত্রীকে (২১) ফেনী শহর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে ফেনী শহরের পূর্ব দেবীপুর এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। জেঠা শ্বশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করায় গত ৯ ডিসেম্বর ফেনীর আদালত পাড়া থেকে তিনি অপহরণের শিকার হন।

    উদ্ধারের পর ওই নারী পুলিশকে জানায়, অপহরণের তিনদিন পর রাতের বেলায় ফেনী শহরের একটি বাসায় নিয়ে তাঁর জেঠা শ্বশুর শফি উল্যাহর ছেলে মো. রিয়াদ ও ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ছোট ধলিয়া এলাকা মোরশেদ আলম স্বপনসহ তিন জন মিলে তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওষুধ খাইয়ে এবং ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত সন্তান প্রসব হয়। পরে তাঁকে ওই বাসায় বেধে রেখে সন্তানটি রিয়াদ ও মোরশেদ অন্য কোথাও নিয়ে গেছে।

    পুলিশ জানায়, উপজেলার ছাড়াইকান্দি এলাকার এক ওমান প্রবাসীর স্ত্রী তাঁর জেঠা শ্বশুর শফি উল্যাহকে আসামি করে গত ২২ নভেম্বর সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এতে বলা হয়, ওই নারীর স্বামী দুই বছর আগে ওমান চলে যান। গত বছরের ১৮ জুন ওই ঘরে অন্য কেউ না থাকায় তাঁকে (নারী) একা পেয়ে ধর্ষণ করেন জেঠা শ্বশুর শফি উল্যাহ। পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানতে পারেন ওই নারী গর্ভবর্তী। মামলা দায়েরের পর ২৬ নভেম্বর অভিযুক্ত শফি উল্যাহ ফেনীর আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। এসময় মামলার বাদীও একই আদালতে হাজির হন। বাদী আদালতে লিখিত আবেদনে এ মামলার আসামিকে জামিনের আপত্তি নেই বলে জানান। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই ঘটনার রাতে একজন অপরিচিত লোক তাঁর ঘরে ঢুকে তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। তাঁর শ্বশুরদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকায় শাশুড়ির কথামতো ওই মামলা করেছেন।

    পরে ওই মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে আদালতের আদেশে বেঞ্চ সহকারী রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে ফেনীর আদালতে মিথ্যা মামলা করায় আরেকটি মামলা করেন। পরে মিথ্যা ধর্ষনের মামলা করায় বাদীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

    রোববার সোনাগাজী মডেল থানায় ধর্ষণ মামলার বাদী ওই নারী পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। একজন আইনজীবী, রিয়াদ ও মোরশেদ মিলে আমাকে মামলায় সহযোগীতাা করার কথা বলে একটি কাগজে আমার নাম লিখে নেয়। তাঁরা আমাকে অনেক ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর কারাগার থেকে আমি বের হলে রিয়াদ ও মোরশেদ আমাকে একটি গাড়ীতে করে একটি বাসায় নিয়ে আটক করে রাখে। দুই-তিনদিন পর তাঁর দুজনসহ আরও একজন মিলে আমাকে জোরপূর্বক ওষুধ খাইয়ে ও ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে আমার সন্তানকে মেরে ফেলে। পরে আমার মৃত সন্তান প্রসব হয়। তখন আমি সাতমাসের অন্তসত্তা ছিলাম। এর পর তাঁরা আমাকে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগীতা করাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে টাঙ্গাইলে নিয়ে একটি ভাড়াবাসায় রেখে আসে। সেখানে রিয়াদের একবন্ধু আমাকে বাজার করে দিত। আমি বাসা থেকে বের হতে পারতাম না। প্রায় দুইমাস পর আমি কৌসুলে ওই বাসা থেকে বের হয়ে মুঠোফোনে আমার ছোটভাইকে বিষয়টি বলি। পরে সে টাঙ্গাইলে গিয়ে গোপনে আমাকে ফেনী নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ফেনী আসার পর আবারও রিয়াদ ও মোরশেদ আমাকে ধরে নিয়ে দেবীপুর একটি বাসায় আটকে রাখে।

    মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) মো. আনোয়ার হুসেন বলেন, রোববার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনী পৌরসভার পূর্ব দেবীপুর এলাকার একটি বাসা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

    সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ অপহরণের তিনমাস পর মামলার বাদীকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত করানোর অভিযোগে শফি উল্যার ছেলে রিয়াদ তাঁর বন্ধু মোরশেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090