৭৬ বছর বয়সী আমেনা আক্তার ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এজন্য ফেনী সদরের ফরহাদনগর থেকে মাসে একবার চেকআপ করার জন্য খালি পেটে চলে আসেন ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে। এখানে এসে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে চলেন তিনি।
আমেনা জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে তার শরীরে ডায়াবেটিস রয়েছে জানতে পারেন। তখন থেকেই নিয়মিত হাসপাতালটিতে এসে চিকিৎসা নেন। তার মতে, বয়স যাই হোক না কেনো, হাসপাতালে নিবন্ধনের পর পাওয়া বইয়ের নির্দেশনা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে ভালো থাকা যায়। নিবন্ধন নিলে এখানে ডাক্তার দেখাতে কোনো ফি লাগে না। পাওয়া যায় অন্যান্য সুবিধাও।
শুধু আমেনা নয়, হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। প্রতিদিন সকালে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর ডায়াবেটিসের পরিমাণ ও শনাক্তের জন্য আসেন দুই হাজারেরও বেশি রোগী। শহর ছাড়াও গ্রামীণ এলাকা থেকে রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। হাসপাতালটি ফেনীর দেড় লাখেরও বেশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে বলে জানান রোগীরা।
হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, ডায়াবেটিস হাসপাতালে রোগীরা নিবন্ধন নিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। নিবন্ধনকারীরা প্রতি টেস্টে আর্থিক ছাড় ও বিনামূল্যে চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র পেয়ে থাকেন। এছাড়াও হাসপাতালের যাবতীয় সেবায় তাদের জন্য রয়েছে নানান সুবিধা। ফলে ফেনীর মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে এ হাসপাতালেই ছুটে আসেন চিকিৎসা নিতে।
তিনি জানান, ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে বর্তমানে এক লাখ ২৫ হাজার ৩৭৪ রোগী নিবন্ধিত রয়েছেন। তারা নিয়মিত চেকআপ ও কনসালটেন্টের পরামর্শের আলোকে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নে নুরুল রওনক ডায়াবেটিস স্বাস্থ্য সেবা উপকেন্দ্রেও নিয়মিত আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, হাসপাতালে নিবন্ধিত রোগীর বাইরে ফেনী জেলার আরও অন্তত ২০-৩০ ভাগ রোগী বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। অনেক রোগী আমাদের হাসপাতালে নিবন্ধন না করেও সেবা নিয়ে থাকেন। ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিবন্ধিত রোগী এক লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি। জেলায় এ সংখ্যা অন্তত এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি রয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে দুই হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যাদের বেশিরভাগই অনিবন্ধিত। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে রোগীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এখানে অত্যাধুনিক সব সেবা মিলছে।
ফেনী ডায়াবেটিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল জানান, ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালটি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হলেও এ হাসপাতালে বর্তমানে সব রোগের চিকিৎসায় অত্যাধুনিক সেবা যোগ হয়েছে। এখানে আইসিইউ, সিসিইউ সেবাও পাচ্ছেন রোগীরা। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা যথাসময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ পাচ্ছেন।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি