ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে প্রয়োজনীয় জনবল চরম সংকটের কারনে স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে। বিশেষ করে ডাক্তার সংকটে রুগীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে। নামে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বিদ্যমান ৩১ শয্যার জনবলও নেই। প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। মহামারী করোনা ভাইরাসে রুগীরা করোনা ইউনিটে হাই ফ্লো অক্সিজেন জোন স্বাস্থ্যসেবা জনবল সংকটে ব্যাঘাত ঘটছে।
আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, মেডিসিন, সার্জারীসহ ৯জন ডাক্তারের স্থলে ৪জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। ৫জন ডাক্তার বদলীজনিত ও পদোন্নতিজনিত কারনে শূন্য রয়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরত ডাক্তারদেরকে সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েকদিন ডিপুটেশনে নিয়ে স্বাস্ত্যসেবা দিতে হয়। তাতে প্রতিদিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রুগিদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ১একর ২৪ শতাংশ জায়গায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে উপজেলা ৪লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবা এহাসপাতাল থেকে পেয়ে থাকে। উপরোন্ত পাশ্ববর্তী নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজীর প্রান্তসীমার রোগিরাও এহাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এই হাসপাতালে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৫০। কর্মরত রয়েছে ৯১জন। ৫৯ পদে জনবল না থাকায় চিকিৎসাসেবা হযবরল অবস্থা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, সার্জারী, মেডিসিন, শিশু বিভাগ, আবাসিক মেডিক্যার অফিসার, গাইনী বিভাগে কোন ডাক্তার নেই। এস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ রুগীর সেবা নিতে অহরহ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদটি দীর্ঘদিন শুন্য রয়েছে। ২য় ও ৩য় শ্রেনীর ১০৮কর্মচারীর মধ্যে ৪০টি শূন্যপদ রয়েছে। ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী ২১জনের মধ্যে আছে ৮জন। এর মধ্যে (এম এল এস এস) ৪টি পদ শূন্য। সিকিউরিটি গাডের্র ২টি পদ শুন্য। ওয়ার্ড বয় ৩জনের মধ্যে রয়েছে ১জন। অপরদিকে ২জন আয়ার মধ্যে আছে ১জন। মালির পদও শুন্য। সুইপারের ৪টি পদে ১জনও নেই। এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভার পদটি শূন্য রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম জানায়, ৩১ শয্যার দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ রয়েছে ৯ টি। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও জনবল ৩১ শয্যারও ঘাটতি রয়েছে। উপরোন্ত মহামারী করোনা চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সেখানে তিনজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদটি শূন্য দীর্ঘদিন। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা রোগীদের সেবা দিতে দেখা যাচ্ছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক্স-রে যন্ত্র নষ্ট থাকায় রোগনির্ণয়ের জন্য তাঁদের বাইরে পাঠান চিকিৎসকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনিশিয়ানের অভাবে একটি নতুন ও একটি পুরোনোসহ দুটি এক্স-রে যন্ত্র পড়ে আছে হাসপাতালে। জরুরি রোগীদের বাইরে গিয়ে এক্স-রে করতে হয়। গত দুই বছর ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলজি বিভাগও বন্ধ ছিল।
শূণ্য পদগুলোর ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, হাসপাতালের জনবল সংকট নিয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এখনও সাড়া মেলেনি। তবে তিনি আশান্বিত হয়তো জনবল সংকট নিরসন হবে। দীর্ঘদিন ডাক্তারের অভাবে হাসপাতালের ভর্তি রুগী ও দৈনিক আগত রুগীরা কষ্ট পাচ্ছেন এপ্রশ্নে তিনি কোন সদত্তোর দেননি।
সরেজমিনে ঘুরে জানাা যায়, এস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেনীর সোনাগাজী, ফেনী সদর, নোয়াখালীর সেনবাগ ও কোম্পানীগঞ্জের সিমান্তের রুগীরাও সেবা নিয়ে থাকে। এতো বড় জনবহুল অধ্যুষিত অতীব গুরুত্বপূর্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার ও কর্মকর্তা কর্মচারীবিহীন থাকায় চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেনা এজনপদবাসী।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি