আবহমান কাল ধরে বয়ে চলা ফেনী কোরবানির হাট সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসতে চলেছে। কোরবানির ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হাটে গিয়ে পশু দেখা, কেনা। কিন্তু এবার ইচ্ছে হলেই কেউ হাটে গিয়ে ভিড় জমাতে পারবেন না।
রোববার (১২ জুলাই) সকালে ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্তের কথা এসেছে। জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান জানান, গরু কেনা-বেচার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন ব্যক্তি হাটে প্রবেশ করতে পারবেন না।
করোনায় ক্রেতার স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় অযথা ঘোরাঘুরিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। গরুর হাটে থাকবে প্রবেশ ও বের হওয়া ভিন্ন ভিন্ন পথ, যেন হাটে ভিড় না জমে। এছাড়া হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা বিধান, জাল টাকা রোধ, স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোরবানির পশুর হাট প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, মহাসড়কে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলতে সেখানে হাট বসবে না। এবং রেল লাইনের পাশে কোরবানির পশুর হাট থাকবে না।
সভায় অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনার বিষয়ে অনলাইন মার্কেটকে আগ্রহী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গরুর খামারি এবং তথ্য কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবেন। যেন অনলাইনে গরু কিনতে ক্রেতা আগ্রহী হয়। তাছাড়া কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন এবং না ঠকেন তা নজরদারিতে রাখা হবে।
ঈদকে সামনে রেখে ভেজাল মসলারোধ, নিত্যপণ্য মানুষের হাতের নাগালে রাখতে ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও ব্যবসায়ী সমিতিকে কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা সভায় বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোকে বিশেষ নজরে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতিতে টেলিমেডিসিন সেবা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ফেনীতে বিভিন্ন পত্রিকার নামে এবং অনলাইনে টকশো করা, লাইভ প্রচারের বিষয়ে সভায় আলোচিত হয়েছে এবং এর বৈধতা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
জেলা পুলিশ বিভাগে নবনিযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসক ও অপরাধ) মাইনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা ফেনীর কল্যাণে ব্যবহার করবো। জালিয়াতি, মানবপাচার ও মাদকের বিরুদ্ধে আমি নিজেই কাজ করবো। তিনি উপস্থিত সবার সহযোগিতা চান।
সভায় করোনায় মৃত জাতীয় পর্যায়ের নেতা অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ নাসিম, সিনিয়র সচিব মহসিন চৌধুরী, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান, ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোজাম্মেল হক ও শরীয়তউল্লাহ বাঙালিসহ ফেনীতে সাম্প্রতিককালে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিবি-৪ ফেনীর উপ-অধিনায়ক মেজর সেলিমুজ্জোহা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা. সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম জাকারিয়া, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি ছলিম উল্যাহ, ফেনী শজর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী প্রমুখ।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি