দাগনভূঞার খুব পরিচিত নাম দাদনা খাল। উপজেলার রাজাপুর বাজারে এর উৎপত্তিস্থল এবং নোয়াখালীর কবিরহাট পয়েন্টে ছোট ফেনী নদী এর সঙ্গমস্থল। পতিত মুখ একদিকে দাগনভূঞার মাতুভূঞা ব্রিজসংলগ্ন ছোট ফেনী নদী, অন্যদিকে সেবারহাট বাজারসংলগ্ন খাল। মাঝে দীর্ঘ আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর, পূর্ব চন্দ্রপুর, মাতুভূঞা ও ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের সীমানায় যুক্ত হয়ে দাগনভূঞা-বসুরহাট সড়কের পাশ ঘেঁষে পৌরসভায় প্রবেশ করেছে খালটি।
খালের পানির ওপর কৃষকদের চাষাবাদ নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমানে খালটির পানি অভিশাপে পরিণত হয়েছে। মানুষের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যার কারণে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। এতে দাগনভূঞার রাজাপুর থেকে পৌরসভা, ইয়াকুবপুর ও সদর উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রামের সার্বিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
দাদনা খালটি দাগনভূঞা উপজেলার সীমানায় ১৩ কিলোমিটার ও ছয় কিলোমিটার নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সংযোগস্থলজুড়ে। গ্রীষ্মকালে দাগনভূঞা অঞ্চলে বিচরণকৃত দাদনা খালের ১৯ কিলোমিটার এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পেটে চলে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দাগনভূঞা পৌর এলাকার ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য দাদনা খাল যেন দখলদারদের পৈতৃক সম্পত্তি। পাল্লা দিয়ে দখলদাররা দখল করছে খালটি। বারবার চেষ্টা করেও খালটির ছোট্ট এ অংশটি দখলমুক্ত না হওয়ায় বাজারসহ পৌর এলাকার অনেক স্থানে সামান্য বৃষ্টিতে পানি উঠে যায়। মাত্র ১০ মিনিটের বৃষ্টিতে বসুরহাট রোড ডুবে একাকার হয়ে যায়। দেখে বোঝা যায় না এটি রাস্তা না বিরাণভূমি। চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় পৌর নাগরিকদের, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের।
সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, দাগনভূঞার মীরের পুল থেকে বসুরহাট রোড়ের মহাজনপুল পর্যন্ত খালটি প্রস্থে ১৫ মিটার (৫০ ফুট) হলেও পৌরসভার ছয় কিলোমিটার এলাকায় প্রস্থ মাত্র তিন-পাঁচ মিটারে (১০-১৭ ফুট)। প্রস্থে খালের অবশিষ্টাংশ এখন বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে। কেউ তিন-চারতলা দালান, আর কেউ বা বাউন্ডারি করে দখল চালিয়ে যাচ্ছে। স্বয়ং পৌর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ সুভাষবাবু নামে একজনের বিরুদ্ধে। তিনি জেলা প্রশাসন থেকে বন্দোবস্ত এনে শর্ত ভেঙে দাদনা খাল দখলে মেতেছেন। একই অপকা-ে জড়িত বহু রাঘববোয়ালও। তাদের বেশিরভাগ প্রভাবশালী হওয়ায় খোদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই নাম মুখে নিতে সাহস পায় না। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিন আর আবর্জনার ভাগাড় হয়ে আছে খালটি। কাঁচা বাজারসহ পুরো বাজারের বর্জ্যে খালের পানি নিষ্কাশন দুরূহ হয়ে পড়েছে। খালের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হওয়ায় দাগনভূঞার রাজাপুর, গজারিয়া, বিজয়পুর, উত্তর চানপুর, দক্ষিন চানপুর, উত্তর চ-ীপুর, দক্ষিণ চ-ীপুর, ইয়াকুবপুর, দেবরামপুর, এনায়েতপুর, বরইয়া, করমুল্লাহপুর, শরীফপুর, এনায়েতনগর, সদর উপজেলার হায়াতপুর, ধর্মপুর, রশিদপুর, ছোট মালিপুর, বাসুদেবপুর, বাগডুবি, পৌরসভার বেতুয়া, ইয়ারপুর, শ্রীধরপুরসহ অন্তত ৩০ গ্রাম প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কৃত্রিম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে এসব এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘর ও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ এখনো পানিতে ডুবে আছে।
দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান খালের অবৈধ দখল ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দাদনা খাল দখলমুক্ত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, শুধু অবৈধ দখলের কারণে খালের দুপাশে দর্শনীয় রাস্তা, সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকিং ওয়ে নির্মাণকাজে বিলম্ব হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইতিপূর্বে পৌরসভাকে খালটি খননে উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সভা থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা চেষ্টাও করেছেন, কিন্তু সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে খালটি খনন করতে হবে।
এ বিষয়ে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া জানান, বিষয়টি ভূমি কর্মকর্তাকে নিয়ে জবরদখল উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা নেবেন।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি