স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও ফেনীর পরশুরামের দুই বধ্যভূমি সংরক্ষণে এগিয়ে আসেনি কেউ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত মালিপাথর বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হলেও সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখনও চিহ্নিত করা হয়নি সলিয়া বধ্যভূমি।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ফেনী অঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি ছিল বিলোনিয়া। মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক লে. কর্ণেল জাফর ইমাম বীর বিক্রমের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী অসম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। বিলোনিয়ায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর সদস্য রৌশন আজিজ, মোয়াজ্জেম হোসেন, আজিজুল হক ও গোলাম মোস্তফা। পরশুরাম থানা রোডে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি অবস্থিত।
বিলোনিয়ায় প্রাচীন স্থাপনাগুলোতে এখনো লেগে আছে গুলির চিহ্ন। ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট একে একে পাক হানাদার মুক্ত করে বিলোনিয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী জয় করে। মুক্তিযোদ্ধারা এগুতে থাকলে পাকবাহিনীর একটি অংশ টিকতে না পেরে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় বিলোনিয়া ও ফেনী। এসময় নির্বিচারে গণহত্যা চালায় পাক-হানাদার বাহিনী।
পরশুরামের দু’টি বধ্যভূমি সেই গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করছে। উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিপাথর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা করা হয় মুক্তিকামী একই পরিবারের ৫ সদস্যকে। এ বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করা হলেও রয়েছে অরক্ষিত।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই শহিদ পরিবারের সন্তান মাওলানা নুরুল আমিন জানান, মালিপাথরের ওই স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তার বাবা, চাচা, জেঠাসহ ৫ জনকে। এখানেই শহীদদের গণকবর দেয়া হয়।
পৌরসভার সলিয়া বধ্যভূমিতে নিরবে শুয়ে আছেন একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞের শিকার একই পরিবারের ৩ মুক্তিকামী শহীদ। হত্যার পর তাঁদের লাশ ফেলে দেয়া হয়েছিল সলিয়া দীঘিতে। সলিয়া দীঘির পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে বিলোনিয়া যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। এটিও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।
পরশুরাম উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হুমায়ন শাহরিয়ার জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সলিয়ায় ৩ জনকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকান্ডের স্থানটি আজও চিহ্নিত করা হয়নি।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রাসেলুল কাদের জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতীয় র্স্বাথে এসব বধ্যভূমি চিহ্নিত ও সংস্কার করা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক প্রকল্প আছে। এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণে আমরা চিঠি প্রেরণ করব।
সম্পাদনা : এএএম/এটি