নারী ও শিশু অধিকার রক্ষায় আইনি লড়াই করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রো-বোনো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
সোমবার রাত ৮টায় লন্ডনে আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের ভার্চুয়াল সম্মেলনে বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান ও ইকুয়েডরের ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে তিনি এ পুরস্কার পেলেন।
আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনস্বার্থে আইনজীবী ইশরাত হাসানের অনেক কাজ রয়েছে। যার মধ্যে ব্যাপক আলোচিত, তার করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, শপিংমল, আদালত, সব অফিসসহ জনবহুল স্থানে ব্রেস্টফিডিং কক্ষ এবং শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনে আদালত রুল জারি করেন।
ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মস্থলে কর্মজীবী মায়ের শিশুসন্তানদের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনজীবী ইশরাত হাসান এই রিটে পিটিশনার করেছিলেন তার ৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর-বিন-সাদীকে।
আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হোরাসিও বার্নাডে নেটো বলেন, জন্মের আগেই গর্ভে সন্তানের লিঙ্গ শনাক্তকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য আবেদন করে ইশরাত হাসান মা ও তাদের শিশুদের অধিকার রক্ষার লড়াই করেছেন।
‘তার যুক্তি ছিল– লিঙ্গ চিহ্নিতকরণের পরীক্ষার ফলে গর্ভের শিশুর সংবিধান স্বীকৃত বেঁচে থাকার ও সমতার অধিকার এবং আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার খর্ব হয়।’
হোরাসিও বার্নাডো নেটো বলেন, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় স্বভাবতই ছেলেসন্তান প্রত্যাশা করা হয়। কোনো মা যখন দেখেন, তার পেটে কন্যাসন্তান, তখন তিনি মানসিক চাপে থাকেন, যা গর্ভে থাকা শিশুর স্বাস্থ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
‘আরও গুরুতর হলো– কোনো কোনো পরিবারে অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের জন্য মানসিক চাপ দেয়া হয়। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকগুলো ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার গর্ভের শিশুর লিঙ্গ চিহ্নিতকরণ বন্ধ করে দিয়েছে।’
ইশরাত হাসান মনে করেন, গর্ভের শিশুর লিঙ্গ চিহ্নিতকরণ পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা গেলে দেশের নারীদের অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে।
এ ছাড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সন্তানের বৈধতা নির্ধারণসংক্রান্ত আইন চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী ইশরাতের করা রিট এবং গণপিটুনিতে নিহত এক মায়ের সন্তানদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইশরাত হাসান বলেন, ভাবতে খুবই ভালো লাগছে– বিশ্বের এতগুলো দেশের আইনজীবীদের মধ্যে পুরস্কারের জন্য আমাকে বেছে নেয়া হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আমার জন্য গৌরবের। এই পুরস্কার কেবল আমার একার নয়, আমাদের দেশের নারী ও শিশুদেরও।
এই নারী আইনজীবী বলেন, আমার জনস্বার্থে করা কাজের স্বীকৃতি এ পুরস্কার। এটি ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে আমাকে আরও সাহস জোগাবে।
বিশ্বের ৮০ হাজার আইনজীবী, ১৯০টি বার অ্যাসোসিয়েশন এবং ল’সোসাইটি আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদর দফতর লন্ডনে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলে আঞ্চলিক অফিস রয়েছে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এপি