আজ

  • শনিবার
  • ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে এ বছরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ধস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লা সড়কের বাসিন্দা মীর হোসেন ১ লাখ ২৩ হাজার টাকায় এবার কোরবানির গরু কিনেছিলেন। আজ সোমবার কোরবানির পর গরুর চামড়া বিক্রির জন্য তিনি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর অপেক্ষায় বিকেল পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরে একজন মৌসুমি ক্রেতা চামড়াটি মাত্র ১০০ টাকা দাম বলে চলে যান। পরে চামড়াটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাকে দিয়ে দেন মীর হোসেন।

    কোরবানির গরুর চামড়া নিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে সদর উপজেলার কাতালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীরও। দুপুরে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে চামড়া নিতে এলে তখন বিক্রির আশায় মাদ্রাসাকে দেননি। পরে বিকেল পর্যন্ত কোনো ক্রেতা না পেয়ে ওই মাদ্রাসাকে চামড়া নিয়ে যেতে বলেন। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়াটি তাদের মাদ্রাসায় পৌঁছে দিতে বলে। পরে উল্টো পকেটের টাকা দিয়ে সেটি মাদ্রাসায় পৌঁছে দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী।

    ফেনীতে এ বছরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ধস নেমেছে। এ বছর গ্রামে গ্রামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখাই মেলেনি। এলাকাভেদে গরু ও মহিষের ছোট–বড় সব ধরনের চামড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এলাকায় কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ীর দেখা না পেয়ে ৯৮ শতাংশ কোরবানির চামড়া স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।

    ফেনী সদর উপজেলার উত্তর ধলিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, গরুর চামড়া তো মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের তিনটি ছাগলের চামড়া মাদ্রাসাও নেয়নি। পরে ছাগলের চামড়াগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

    পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগরের বাসিন্দা আবু ইউছুপ জানান, তিনি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় গরু কিনেছিলেন। সারা দিন ক্রেতার আশায় বসে থেকে বিকেলে ওই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ১০০ টাকায়।

    দাগনভূঞার সিলোনীয়া বাজারের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, তাঁর এলাকার মো. রানা নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রামে গ্রামে হেঁটে গড়ে ২০০ টাকা করে ২২টি চামড়া কিনে কয়েক শ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৩০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।

    রাত আটটায় ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে একজন মৌসুমি ব্যবসায়ীকে আবছা আলোতে পাঁচটি চামড়া নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, শহরের দাউদপুর এলাকা থেকে তিনি চামড়াগুলো গড়ে ২০০ টাকা করে কিনেছেন। নিজের খরচ ও রিকশা ভাড়া দিয়ে বিক্রির জন্য এনেছেন। ৩০০ টাকা করে দাম হলে বিক্রি করবেন। ব্যাপারীরা ১৫০ টাকা বলে চলে গেছেন।

    ফেনীর সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম বা আড়তদারের ব্যবসাকেন্দ্র পাঁচগাছিয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে তাঁরা কোনো নির্দিষ্ট দর পাননি। তা ছাড়া ঢাকায় ট্যানারিতে বা বড় আড়তে চামড়া বিক্রি করে বকেয়া টাকা পাঁচ বছরেও আদায় করা যায় না।

    সোনাগাজীর বাদুরিয়া গ্রামের আবুল বাসার বলেন, ‘আগে কোরবানির পশুর চামড়ার কেনার জন্য গ্রামে একাধিক মৌসুমি ক্রেতা দেখা যেত। দু–তিন বছর ধরে চামড়া কিনতে গ্রামে কোনো মৌসুমি ক্রেতার দেখা মেলেনি। এ বছর সারা দিনেও চামড়া কেনার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁরা তাঁদের কোরবানির পশুর চামড়া স্থানীয় মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন।

    সন্ধ্যায় ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, তিনি গড়ে ৩৫০ টাকা করে ১১টি বড় গরুর চামড়া কিনে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে গড়ে ৫০ টাকা লাভে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তবে সংগ্রহ খরচ বাদ দিলে কোনো লাভই হয়নি।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাদ্রাসা তত্ত্বাবধায়ক জানান, স্থানীয়ভাবে গরু ও মহিষের ৩৭০টি চামড়া সংগ্রহ করে পাঁচগাছিয়া বাজারের একটি বড় আড়তে নিয়ে গেলে তাঁরা গড়ে ৩৩০ টাকা করে দাম দিয়েছেন।

    শহরের শান্তি কোম্পানি রোডের ইসলামিয়া এতিমখানার সভাপতি কে বি এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁদের এতিমখানায় পাওয়া ২৬৭টি ছোট-বড় চামড়া গড়ে ৩৭০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তাঁরা কোনো ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেননি।

    ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারের সবচেয়ে বড় আড়তদার নিজাম উদ্দিন জানান, তিনি এ বছর ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় ১০ হাজার গরু–মহিষের চামড়া কিনেছেন। অপর আড়তদার মো. নুর নবী জানান, তিনি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে প্রায় ১ হাজার চামড়া কিনেছেন। তিনিও বলেন, ঢাকায় চামড়া বিক্রি করে পাঁচ বছরেও টাকা পাওয়া যায় না।

    পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবল হক লিটন বলেন, জেলায় একমাত্র তাঁর ইউনিয়নের পাঁচগাছিয়া বাজারে চামড়ার ছোট–বড় ৫৫-৬০ জন আড়তদার ছিলেন। গত কয়েক বছরে লোকসানের কারণে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে মাত্র ১৪-১৫ জন আড়তদার টিকে রয়েছেন। চলতি বছর ৩৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় তাঁরা প্রায় কয়েক হাজার চামড়া কিনেছেন। তিনি জানান, এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও কিছু আড়তদার চামড়া কিনেছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090