ফেনীতে স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। জেলায় ১ হাজার ১শ ৭৫ পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৭শ ১৩ জন। বছরের পর বছর ধরে সাড়ে ৪ শতাধিক পদ শূন্য রয়েছে। এতে করে চিকিৎসা সেবার মান ও দাপ্তরিক কার্যক্রমে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ৫০ শয্যার পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১০টি কনসালটেন্ট পদের মধ্যে একটি ছাড়া সবকটিই শূন্য রয়েছে। কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ থাকলেও ডা. আবদুল মতিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তি রয়েছেন। এ উপজেলায় ১শ ৩৭টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৭২টি পদ শূন্য রয়েছে। একইচিত্র অপরাপর উপজেলায়ও। দাগনভূঞা উপজেলায় ৫টি কনসালটেন্ট পদের মধ্যে একটি ছাড়া বাকীগুলো শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ১৪৮টি পদের মধ্যে ৫১ পদই শূন্য রয়েছে। এখানে বেশি শূন্য ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদ। এতে করে দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, বিগত বছরের শেষ দিকে চিকিৎসক দিলেও ২০১০ সালের পর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অবসর ও বদলী জনিত কারণে শূন্যপদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, স্বয়ং জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ৩৪টি পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে ১৪ জন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ২৫৩টি পদের মধ্যে ৬৪, বক্ষ্যব্যধি হাসপাতালে ১৬ পদের মধ্যে ১৩, বক্ষব্যধি ক্লিনিকে ১৭ পদের মধ্যে ১১, ট্রমা সেন্টারে ২৩ পদের মধ্যে ১৪, সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ১৬৬ পদের মধ্যে ৭৪, ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ১৫৪ পদের মধ্যে ৬৯, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ১শ পদের মধ্যে ৩৭, ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ১২৭টি পদের মধ্যে ৪৩টি পদ শূন্য পড়ে আছে।
দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, চিকিৎসক সংকট কিছুটা কেটে উঠলেও ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদ শূন্য থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে কষ্ট হয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এমনকি দাপ্তরিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।
পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল খালেক জানান, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, তিনি গত এক বছর ছাগলনাইয়ায় দায়িত্ব পালন করছেন। শূন্যপদের বিষয়টি একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হলেও অগ্রগতি হয়নি।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল মোমেন শূন্যপদ থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ১ম ও ২য় শ্রেণির নিয়োগ পিএসসি (সরকারী কর্ম কমিশন) থেকে হয়ে থাকে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির নিয়োগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিয়ে থাকে। আদালতে একটি রিটের কারণে নিয়োগ বন্ধ আছে। এছাড়া ২০১৫ সালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষা হলেও ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণির আরো একটি নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষার তারিখ অদ্যাবধি ঘোষণা হয়নি।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি/এপি