ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৯ সালের এই দিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। রাফির পরিবারের দাবি, আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অবিলম্বে যেন মামলার রায় বাস্তবায়ন করা হয়।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাফিদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চার পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। মা শিরিনা আক্তার বলেন, ‘রাফির শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। আমার পরিবারের সদস্যদের বুকে টেনে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি শতভাগ আশাবাদী যে উচ্চ আদালতেও আসামিদের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকবে। আমরা আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের প্রহর গুনছি।’
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন রাফি। তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এরপর ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার একটি ভবনের ছাদে রাফির শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। এর চার দিন পর মৃত্যু হয় তাঁর। এ ঘটনায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
মামলায় মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। একই বছরের ২৪ অক্টোবর ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মাদরাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মাদরাসার গভর্নিং কমিটির তৎকালীন সহসভাপতি রুহুল আমিন, মাদরাসার শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, নুরউদ্দিন, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদের, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। সেই বেঞ্চ করোনার কারণে বাতিল হয়ে গেছে। এরপর বেঞ্চ গঠন করা হয়নি। তাই শুনানি হচ্ছে না। করোনা মহামারি কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হবে।’
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘খুনি ও তাদের স্বজনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমরা মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে আমাদের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানিয়েছেন যে মহামারির কারণে মামলার বেঞ্চ গঠনে দেরি হচ্ছে।’
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি