আজ

  • সোমবার
  • ২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কৃষকের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে সরকারের যথার্থ সিদ্ধান্ত

  • ফেনী ট্রিবিউন রিপোর্ট
  • এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপন্ন হওয়ার পরও চাল আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক বহাল না থাকায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ধান উৎপাদনকারী কৃষক। বোরো মৌসুমের শুরুতে এ নিয়ে লেখালেখি হলেও সরকার তখন বিষয়টি আমলে নেয়নি।
    গত সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান,
    চাল আমদানির ওপর তুলে নেওয়া আমদানি শুল্ক আবার আরোপ করা
    হবে এবং ৭ জুন অর্থমন্ত্রী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, তাতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলে
    মনে করি।

    এর আগে প্রথম আলোয় চাল আমদানির যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল, তা ছিল উদ্বেগজনক। সরকারি হিসাবে, গত বছর বন্যায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হয়েছিল। অথচ এই সময়ে আমদানি করা হয় ৩৭ লাখ টন চাল।
    এ ছাড়া আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও ৪৫ লাখ টন। গত বছর ভারতে চালের দাম কম ছিল। আর বাংলাদেশে আমদানি শুল্কও পুরোপুরি তুলে
    দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি চাল আমদানি করেন।

    উল্লেখ্য, চালের ওপর আমদানি শুল্ক ছিল ২৮ শতাংশ। সে সময়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলেই ধারণা করি। কেননা, সরকারি খাদ্যগুদামে মজুতের পরিমাণ গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছিল। কিন্তু ৩৭ লাখ টন আমদানি এবং আরও ৪৫ লাখ টন প্রক্রিয়াধীন থাকার পরও কেন এত দিন চাল আমদানির ওপর শুল্ক রেয়াত দেওয়া হচ্ছিল, তা বোধগম্য নয়।

    প্রয়োজনে পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো বা বাড়ানো হয় বলে বাণিজ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার যথার্থতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অনেক সময় ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি সরকার নিতে পারে না। চালের ক্ষেত্রেও সে রকম কিছু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, কৃষক শুধু আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিই নন, দেশের সতেরো কোটি মানুষের খাদ্যের জোগানও দিচ্ছেন তাঁরা।
    গত বছর ধান উৎপাদন কম হওয়ার কারণে চাল আমদানির জন্য শুল্ক কমাতে হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত সবাই মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হওয়ার পরও আমদানিকারকদের জন্য কেন সেই সুযোগ বহাল রাখা হলো? প্রভাবশালী ১০ থেকে ১২টি শিল্প-ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে কৃষককে বিপদে ফেলা যাবে না।

    ব্যবসায়ীরা বিনা শুল্কে চাল আমদানি করলেও চালের বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। অথচ কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে চালকল মালিকদেরও কারসাজি আছে বলে ধারণা করা যায়। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে এবার আগের বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি ধান উৎপাদিত হয়েছে।
    গত বছরের তুলনায় ১ লাখ হেক্টর বেশি জমিতে এবার ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় মণপ্রতি ৮৯৬ টাকা হলেও তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০০-৮৫০ টাকায়। আবার ধানের বাজারের তুলনায় চালের দাম বেশি। ফলে ভোক্তাসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

    অতএব, চাল আমদানির ওপর পূর্বনির্ধারিত শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা বাণিজ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, সেটি এখনই কার্যকর করা হোক। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চেয়ে কৃষকের স্বার্থরক্ষাই অধিক জরুরি। চালের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করলে আমদানির প্রবণতা কমবে এবং কৃষকও তার থেকে লাভবান হবেন আশা করা যায়।


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090