আজ

  • শনিবার
  • ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীর তিনটি আসনে মাঠ চষছেন নতুন প্রার্থীরা

  • বিশেষ প্রতিবেদক
  • একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে ফেনীর তিনটি আসনে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী দলগুলোতে নতুন মুখের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে দলীয় সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, পোষ্টার, ব্যানার, পেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক প্রার্থী তার সমর্থিত গোষ্ঠী তৈরি করে দলীয় প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন ভোটারদের কাছে। মনোনয়ন লবিংয়ে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে কদর বাড়ছে তৃণমূল নেতাদের। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে অভ্যন্তরীন দ্বন্ধ বাড়ছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে নেতাদের দাবী বড় দলে প্রার্থীতা নিয়ে প্রতিযোগীতা থাকাটাই স্বাভাবিক।

    দলীয় ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারণার ঢেউ নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জেও লেগেছে। ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া) এ নির্বাচনী আসনের ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়ি। তিনি এ আসন থেকে ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালে মোট চারবার এমপি নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করলে এ আসনে নিশ্চিতভাবেই এমপি পদে প্রার্থী হবেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে খালেদা জিয়া কারাবন্ধী থাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিজ নির্বাচনী এলাকা ফেনী-১ আসনের তৃনমূল বিএনপি পূর্ণগঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু। তাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে তাঁকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

    বর্তমানে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জাসদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, আগামীতেও তিনি এই আসনে আবার প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে আ.লীগ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এর নাম শোনা যাচ্ছে। এই আসনে আ.লীগ থেকে নতুন মুখ ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ফেনী সমিতি ঢাকার সভাপতি ও জেলা আ.লীগ সদস্য শেখ আবদুল্লাহ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন।
    বর্তমানে এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা নাজমা আক্তারকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখানে ইসলামী আন্দোলন থেকে মাওলানা কাজী গোলাম কিবরিয়া প্রার্থীকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

    ফেনী-২ (সদর) ফেনীর ৩টি আসনের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন। এ আসন থেকে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। আ.লীগ, বিএনপি যারা ক্ষমতায় আসেন তারাই জেলার কান্ডারী বনে যান। ফেনী পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন নিয়ে ফেনী-২ সদর আসন গঠিত। এ আসন থেকে পরপর তিনবার আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন হাজারী এমপি নিবার্চিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে নিজাম হাজারীর নেতৃত্বে একক নিয়ন্ত্রন চলছে দলীয় কার্যক্রম। আগামী নির্বাচনে তার বিকল্প দেখছে না দলের নেতাকর্মীরা। তবে নতুন মুখ হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ ভূঞা নাসির, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাহেদ রেজা শিমুল, ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এড. কাজী ওয়ালী উদ্দিন ফয়সাল, জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম. আজহারুল হক আরজু, বিএনপি থেকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ভিপি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে, এ আসনে বিএনপিতে নতুন মুখ হিসেবে রয়েছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, ফেনী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার। জাতীয় পার্টি থেকে নতুন মুখ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার নজরুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন থেকে নতুন মুখ মাওলানা নুরুল করিম বেলালীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

    ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বরাবরের মতোই বেশি। বড় দুই দলেই এখানে রয়েছে অনেক অনেক নতুন মুখ।
    ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম উল্যাহ এখানে এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০১ ও ২০০৮ সালে এ আসনে পরপর দুইবার এমপি নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির সভাপতি প্রয়াত মোশাররফ হোসেন।
    আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার। আওয়ামীলীগে নতুন মুখ হিসেবে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আকরাম হোসেন হুমায়ুন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, অভিনেত্রী ও নির্মাতা শমী কায়সার, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেড.এম কামরুল আনাম, জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এড.শাহজাহান সাজু, সোনাগাজী পৌর মেয়র এড. রফিকুল ইসলাম খোকন, এছাড়াও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর নামও রয়েছে আলোচনায়।

    বিএনপি থেকে নতুন মুখ হিসেবে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, এডভোকেট শাহেনা আক্তার সানু, দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সোলায়মান ভূঞা, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক সাদরাজ জামান। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে পার্টি চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার এর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন দিবসে পোস্টার লাগিয়ে নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় আছেন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, জাসদ (রব) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এর নাম আলোচনায় রয়েছে। এদিকে ইসলামী আন্দোলন থেকে মাওলানা আবদুর রাজ্জাককে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

    তবে নতুন প্রার্থীদের সমাগমে পুরো জেলা জুড়ে নির্বাচনী মাঠ সরগরম হচ্ছে। চা-দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত পর্যন্ত প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে শেষতক দলীয় টিকিট কে পাবেন সে অপেক্ষায় রয়েছে ভোটাররা।

    মনোনয়ন প্রসঙ্গে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বিকম বলেন, ফেনীর তিনটি আসনে নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা। দলের সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা নৌকা প্রতীকে তাকে বিজয়ী করে আনবো।

    বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশে এখনো নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়নি। শুধু একতরফা ভাবে সরকারী দল নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। বিগত ১৯৯১, ৯৬, ২০০১ ও ২০১৪ নির্বাচন আপনারা দেখেছেন। দেশে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠুু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক। এ মহুর্তে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাবন্ধী রয়েছেন। তাকে জেলে রেখে নির্বাচনের পরিবেশ দেখছেনা বিএনপি।

    সম্পাদনা : এএএম/জেএইচ


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090