ফেনী শহরের বনানীপাড়া ও শান্তিধারা আবাসিক এলাকার বাড়ী ভাড়ার নামে অভিনব কায়দায় স্বর্নালংকার আত্মসাতের ঘটনায় দুই নারীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযানে কিছু মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মো. আলী হাসান (৫০), বেবী আক্তার ওরফে বকুলকে (৪০), মো. শাহজালাল (৩৮), তাসলিমা বেগমকে (৩৫) ও রূপ কমল চন্দ্র দাসের (৪৩)।
বুধবার দুপুরে ফেনীর পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বদরুল আলম মোল্লা।
এ সময় ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা (ক্রাইম এন্ড অবস), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অং প্রু মারমা, ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন, বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিএসবি) মো. শহিদ উল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শহরের বারাহিপুর বনানী পাড়ায় মোহাম্মদ আহসানুল করিমের মনোয়ারা ভ্যালীতে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে নারীসহ ৩জন প্রবেশ করে। তারা নানা কথার মাধ্যমে গৃহকর্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বিশ্বাস অর্জন করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ২৮ লাখ টাকা দামের ৪২ ভরি ১০ আনা ওজনের স্বর্নলংকার কৌশলে করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মোহাম্মদ আহসানুল করিম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন (নং-০২/১৪৬, তাং-০২/০৩/২২ইং)।
অপরদিকে গত ২৬ জানুয়ারী সকালে একই চক্র শহরের শান্তিধারা আবাসিক এলাকার করিম ম্যানশনে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ঘরে প্রবেশ ছানোয়ারা বেগমমের সাথে প্রতারণা করে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণলংকার নিযে যায়। এ ঘটনায় ছানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানার মামলা করেন (নং-০৮/২১২, তারিখ-০৬/০৪/২২ইং)।
এসব ঘটনার পর ফেনী পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন সহ তথ্য প্রযুক্তি ও ম্যানুয়াল সোর্সিং এবং ঘটনাস্থলে আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িত পুরুষ ও মহিলাকে প্রতারক চক্রকে সনাক্তসহ আত্মসাৎকৃত স্বর্নালংকার উদ্ধারে একাধিক অভিযান চালায়। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং অবস্থান নির্ণয়ে করে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অং প্রু মারমার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার মোগড়া পাড়া থেকে ৫ এপ্রিল রাতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. আলী হাসান (৫০), বেবী আক্তার ওরফে বকুলকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। আসামীদের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ি- কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকা থেকে মো. শাহজালাল (৩৮)ও তাসলিমা বেগমকে (৩৫), গ্রেপ্তার করা হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কুমিল্লার থানার ইলিয়টগঞ্জ বাজারের স্বর্ণ দোকানদার রূপ কমল চন্দ্র দাসের (৪৩) নিকট আত্মসাৎকৃত স্বর্ণালংকার বিক্রি করেন। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয় এবং ইলিয়টগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে ১ ভরি ১৫ আনা গলানো স্বর্ণ, ১টি স্বর্ণের চেইন ও ১ জোড়া কানের দুল জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণালংকারের সর্বমোট পরিমাণ ৩ ভরি ৫ আনা, যার মূল্য অনুমান ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা একটি সঙ্গবদ্ধ প্রতারক চক্র। ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসা-বাড়ীতে প্রবেশ করে এসব করে থাকেন। তারা বাড়ীর গৃহকর্ত্রীদের অভিনব কায়দায় বশীভূত করে স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করে থাকে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, পাঁচ আসামীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি