আজ

  • মঙ্গলবার
  • ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সংযোগ থাকলেও ফেনীতে জ্বলছে না চুলা!

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • ফেনী শহরের দাউদপুল এলাকার বাসিন্দা পারভেজ হোসাইন। স্ত্রী-সন্তানসহ তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তিন ছেলে সকাল হলেই স্কুলে যায়, পারভেজ হোসেনকেও সকাল সকাল যেতে হয় অফিসে। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে নিদারুণ দুর্ভোগে রয়েছেন গৃহিণী নাসরিন সুলতানা লতা। কারণ একটাই গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও জ্বলছে না তার ঘরের চুলা। সন্তানদের স্কুলের টিফিন আর স্বামীর জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে প্রতিদিন রীতিমত যুদ্ধ করতে হয় নাসরিন সুলতানাকে।

    এমন চিত্র ফেনী শহরের এক-দুই বাসায় নয়, জেলার প্রায় প্রতিটি বাসার চিত্রই এমন। গ্যাস নিয়ে তীব্র ভোগান্তি পোহাচ্ছে পুরো জেলার মানুষ।

    বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেডের আওতাধীন ফেনী জেলায় চলছে গ্যাস লুটপাটের মহোৎসব। গ্যাসের চাপ না থাকায় গ্রাহকরা বিল দিয়েও সিলিন্ডার ছাড়া জ্বালাতে পারছেন না চুলা।

    অপরদিকে কালো তালিকাভুক্ত কিছু ঠিকাদারও অসাধু র্কমর্কতারা চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

    তারা ভুয়া চাহিদাপত্রও কার্যাদেশ তৈরি করে প্রতিনিয়ত দিচ্ছেন অবৈধ সংযোগ। আর অপরকিল্পতিভাবে এসব সংযোগ দেওয়ায় সরকার যেমন হারাচ্ছে রাজস্ব তেমনি লাইনে থাকছে না গ্যাসের চাপ। ফলে তীব্র গ্যাস সংকটে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পাশাপাশি হাজারো আবেদন অফিসে বছরের পর বছর ঝুলে থাকলে তাদের দেওয়া হচ্ছে না সংযোগ।

    বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধ রয়েছেন গ্যাস সংযোগ। তবুও ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া এলাকায় ঠিকাদারও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে চোরাই পথে লাখ টাকা হাতিয়ে দেওয়া হচ্ছে নতুন অবৈধ সংযোগ। পরে খবর পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কর্তৃপক্ষ। এভাবে জেলার প্রায় ৫০ শতাংশই রয়েছে অবৈধ সংযোগ।

    এসবে ভুয়া রশিদ দিয়ে এলাকা ভাগ করে ফিটাররা (মাঠকর্মী) উত্তোলন করছে বিলগুলো। তবে এগুলো জমা হচ্ছে না সরকারি কোনোখাতে, যাচ্ছে তাদের পকেটে। এতে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রায় বাড়িতে দুই থেকে চারটি লাইনের অনুমোদন থাকলেও তারা জ্বালাচ্ছেন একাধিক চুলা। তাই গ্যাসের চাপ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বৈধ গ্রাহকরা।

    জসিম উদ্দিন নামে শহরের পেট্রোবাংলা এলাকার একবাড়ি মালিক জানান, তার সাততলা বাড়িতে ২৯টি পরিবার থাকে। সবার বাসায় গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও দিনের বেশির ভাগ সময় চুলা জ্বলে না। ভাড়াটিয়ারা গ্যাসের বিল দিয়েও চুলা জ্বালাতে পারে না।

    নার্গিস আক্তার নামে এক গৃহিণী জানান, সকাল ৭টায় গ্যাস চলে যায় আসে রাত ১০টার পরে। বাধ্য হয়েই গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও চুলা জ্বালাতে হয় সিলিন্ডার দিয়ে। এজন্য প্রতিমাসে গুণতে হয় অতিরিক্ত খরচ।

    এদিকে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলায় প্রায় ৩২ হাজার আবাসিক ও ব্যবসায়িক গ্রাহক রয়েছে। অসাধু ঠিকাদারদের তালিকা করে ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা। এতে প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। পাশাপাশি গ্যাসের তীব্র সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চলবে বলে জানায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন।

    বাখরাবাদ ডিস্ট্রিবিউশন ফেনীর ব্যবস্থাপক মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, গত কয়েক মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যেসব কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদার রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

    তবে কবে নাগাদ গ্যাস সংকটের অবসান হবে তার কোনো সমাধান দিতে পারেনি ফেনী বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ। পুরো জেলায় কি পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে তার পরিসংখ্যানও দিতে পারেনি বাখরাবাদ। এদিকে বিষয়টি নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছেন গ্রাহকরা।

    ফেনী ট্রিবিউন/এসএইচডি/এএটি/এএএম


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090