ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে-রাস্তা, ফসলি জমি ও মাছের ঘের। অন্যদিকে ভারতের অংশে নদীপাড় হচ্ছে ভরাট। ভাঙন অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রামের মিরসরাই অংশে ভাঙনের কবলে পড়তে পারে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগরের সংযোগ বেড়িবাঁধ, সড়ক ও বৈদ্যুতিক লাইন। এখন বন্যার কারণে দেখা না গেলেও ফেনী নদীর ভারতীয় পাড় ভরাট হচ্ছে। পানি কমে গেলে দেখা যাবে নদীর ভাঙনে ফেনী জেলার সংকুচিত হয়ে গেছে।
নদী পাড়ের মানুষ জানান, মূলত ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে ফেনী নদী ভাঙছে। ভাঙনে বাংলাদেশ অংশে নদী প্রবেশ করলেও ভারতের পার্শ্বে ভরাট হচ্ছে। বন্যার পর ফেনী নদীর ভারতীয় এলাকার মানচিত্রে ভ‚মি বাড়লেও বাংলাদেশ অংশ কমবে। পাল্টে যাবে মানচিত্র। নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বাংলাদেশ অংশের জগন্নাথ সোনাপুর, জয়পুর, জয়চাঁদপুর, মুহুরি, ধুমঘাট ব্রিজ, অলি নগরের পশ্চিমাঞ্চল, ঘোপাল ইউনিয়নের লাঙ্গমোড়া গ্রাম, ধুপঘাট ব্রিজ, শুভপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে হুমকির মুখে পড়েছে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি স্মারক শুভপুর ব্রিজ। এছাড়াও ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের সর্ব উত্তর-পশ্চিম জনপদ দৃষ্টিনন্দন মুহুরি প্রকল্প এলাকার সেচ প্রকল্প নিকটবর্তী ফেনী নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে শত শত মৎস্য খামারির মাছের খামার, পাউবো নির্মিত কয়েকটি রাস্তা ও কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর শত ফুট ভাঙলেই অবশিষ্ট মাছের খামারসহ মুহুরি প্রকল্প টু অর্থনৈতিক জোন বিকল্প সড়ক এবং বৈদ্যুতিক লাইনসহ তলিয়ে যাবে। স্থানীয়রা জানান, মিরসরাই উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা মূলত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। এলাকায় তারা প্রভাবশালী এবং প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিপন্ন মানুষ প্রতিবাদ দূরের কথা প্রকৃত চিত্র সাংবাদিকদের জানাতে ভয় পায়।
অপরদিকে ছাগলনাইয়ায় ফেনী নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে দুই দফায় ৭ লাখ জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। জরিমানাকৃত ব্যক্তির নাম মো. সালাহ উদ্দিন। সে বালু উত্তোলনকারী মিরসরাই উপজেলার সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিমের লিজা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোমায়রা ইসলামের নেতৃত্বে ৪ বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের যৌথ সমš^য়ে এ অভিযান পরিচালনা করে ২য় দফায় ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ফেনী নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে ছাগলনাইয়ার শুভপুর ইউনিয়নের তুলাতলী চরে গিয়ে দেখা যায় ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারীরা চট্টগ্রামের মিরসরাই হতে এসেছে। তাই বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী সালাহ উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তির তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তারা।
হোমায়রা ইসলাম জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর পাড় কাটার ফলে শুভপুর ইউনিয়নের ফেনী নদীর পাড়ে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে কৃষি জমি, বসতভিটা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। একই সাথে পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটছে। জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে জানান তিনি।
এর আগে ৩১ আগস্ট ফেনী নদীর বিভিন্ন অংশে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল ভ্রাম্যমান। এর মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে নদীতে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও অসংখ্য স্থাপনা। নদীতে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন।
নুর উদ্দিন, শিরিনা আক্তার, আবদুল মালেক, জাহাঙ্গীর, বেলালসহ জয়চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, মীরসরাই এলাকা থেকে একটি প্রভাবশালী মহল ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বালু উত্তোলন করায় অসংখ্যা ঘর বাড়ী, স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি