শরতের সকালে হালকা শীতের আমেজ। রোদের রঙ যত উজ্জ্বল হয় একটু একটু করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। এরই মাঝে স্মৃতি রোমন্থনে মিলন মেলায় একঝাঁক চির তরুণ। স্মৃতির আয়নায় চোখে-মুখে তারুণ্যের প্রকাশ যেন সেই ঝলমলে একুশ। কেউ বন্ধুর গলা জড়িয়ে হাঁটছেন, কেউ বন্ধুকে পাশে নিয়ে সেলফি তুলছেন, চিরচেনা গানের সুরে নেচে-গেয়ে আনন্দে আত্মহারা অনেকেই।
এমনি বৈচিত্র্যময় এক উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছিল ফেনী কম্পিউটার ইনষ্টিটিউট ক্যাম্পাস। শুক্রবার সারাদিন ইনষ্টিটিউটের প্রাক্তন ছাত্রদের আয়োজনে আনন্দে-উৎসবে মেতে ছিলেন প্রায় দুই হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
উৎসবের নাম ‘অ্যালামনাই মিলন মেলা’। সেই মিলন মেলা ঘিরে পুরনো বন্ধুকে কাছে পাওয়ার অভূতপূর্ব মুহূর্তগুলোর উচ্ছলতা চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। সকাল ৮টা থেকেই খুলে যায় ইনষ্টিটিউটের গেট। শতাধিক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী পুরো আয়োজনস্থলে সেবা দেওয়ার জন্য এসেছেন আরও আগেই। ৮টায় যখন গেট খোলা হবে তার আগেই অ্যালামনাই মিলন মেলায় নিবন্ধন করা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের লাইন দীর্ঘ হতে শুরু করেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা নিবন্ধন কার্ড দেখে সুশৃঙ্খলভাবে সবাইকে ভেতরে যেতে সহায়তা করছিলেন।
সকাল ৯টার আগেই মাঠের আয়োজনস্থল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখর হয়ে ওঠে। ‘বন্ধু, কেমন আছিস, কী খবর বল?’ কুশল বিনিময় আর হৃদয়ের উষ্ণতায় প্রাণের টানে ইনষ্টিটিউটের সেই দিনগুলোয় ফিরে আসা। স্থানে স্থানে আড্ডা, বিভিন্ন ব্যাচে, বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলেও এখানে-সেখানে বসে গেছেন। এর মধ্যে চলে সকালের নাশতা পর্ব।
সকাল সাড়ে ১১টায় উদ্বোধনী পর্ব। এ পর্বে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনে অংশ নেন উপস্থিত সবাই। এরপর মিলন মেলা মঞ্চে শুরু হয় উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠান। মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেলে ইনষ্টিটিউটের কয়েক হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সমাজসেবী, সবাই সমাজে নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত।
ফেনী কম্পিউটার ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার রকিব উল্যাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী কম্পিউটার ইনষ্টিটিউটের আরএস বিভাগের প্রধান দেবব্রত কুমার নাথ, ডিটিএনটি বিভাগের প্রধান মো. আবদুল্লাহ আল-মামুন, টিসিটি বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মাহবুব আলম, সিএসটি বিভাগের প্রধান আফরোজা জয়নব।
আলোচনায় অংশ নেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাহ উদ্দিন ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হায়দার জজ, সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম জুয়েল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন রিন্টু, ফেনী সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ আবদুস শুক্কুর মানিক। স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন ছাত্র খোন্দকার আকবর ফরহান, আবু সুফিয়ান, আসাদুজ্জামান অয়ন, আবির হাসান, নাজমুল হক ভূঞা, জহিরুল হক দিদার, হেলাল উদ্দিন, এম. ফখরুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ফেনী ট্রিবিউন’ এডিটর ও ডেইলী সানের ফেনী প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ফেনী প্রতিনিধি এম. এমরান পাটোয়ারী, অনলাইন পোর্টাল জেএস নিউজের সম্পাদক মেহেরাব হোসেন মেহেদী, এনটিভির চিত্র সাংবাদিক তোফায়েল আহাম্মদ নিলয়, এটিএন নিউজের চিত্র সাংবাদিক লিংকন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিদারুল কবির রতন বলেন, আগামীর বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ তোমাদের উপর নির্ভর করছে। দেশকে, দেশের পতাকাকে আদর্শের জায়গা থেকে শ্রদ্ধা করতে হবে। দূনীতি ও দূনীতিবাজকে অন্তর থেকে ঘৃণা করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার থাকতে হবে। তাহলেই ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে তোমরা সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।
মধ্যাহ্ন বিরতি জুমার নামাজের পর প্রাণখোলা আড্ডায় মাতেন মিলনমেলায় আসা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। উন্মুক্ত মাঠে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। ছাত্রজীবনের ছোট ভাই, বড় ভাই বাধা থাকেনি।
বিকেলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। গানে গানে আবার দেখার প্রতিশ্রুতিতে ভাঙে মিলন মেলা।
ফেনী ট্রিবিউন/ এএএম/এটি/এপি/আরএ