লাখো ভক্ত অনুরাগীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে অসুস্থতার কাছে হার মেনে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আশরাফকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো প্রচার নেই। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও করেন তার প্রশংসা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জটিল পরিস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ আশরাফ। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা কারাবন্দী হলে আওয়ামী লীগের যে কয়জন নেতা দলের হাল ধরেছিলেন তাদের সৈয়দ আশরাফ অন্যতম।
১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
সৈয়দ আশরাফ এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। সেখানেও আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি লন্ডনস্থ বাংলাদেশ যুব লীগের সদস্য ছিলেন। তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশি ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এফবিওয়াইইউ) এর শিক্ষা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ব্রিটিশ ভারতীয় শীলা ঠাকুরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মারা যান আশরাফ পত্মী শিলা ইসলামও। তিনি থাকতেন যুক্তরাজ্যে। তিনিও ভুগছিলেন জটিল রোগে। স্ত্রী বিয়োগের ব্যাথায় কাতর আশরাফের শরীরেও মারণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।
সৈয়দ আশরাফ ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন। কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। সে সময়ে জাতীয় ঐক্যমতের সরকারে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন তিনি। ওই সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফ। মহাজোট সরকারের পুরোটা সময় তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে পুনরায় এমপি হন তিনি। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা।
গত বছর ৩ জুলাই চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। শারীরিক এই অবস্থাতে তাকে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ। আর টানা পঞ্চমবারের মতো তাকে এমপি নির্বাচিত করে ওই এলাকার জনগণ জানিয়ে দেন, তাদের মণিকোঠায় ছিলেন আশরাফ।
সম্পাদনা : এএএম/এলকে/আরএ