আজ

  • শুক্রবার
  • ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনাগাজীতে হিন্দু শিক্ষক দিয়ে চলছে ইসলাম শিক্ষার পাঠদান

  • সোনাগাজী প্রতিনিধি
  • ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোলাইমান ভূঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ে মুসলিম শিক্ষক না থাকায় হিন্দু শিক্ষক দিয়েই চলছে ইসলাম শিক্ষার পাঠদান। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে মুসলিম শিক্ষক না থাকায় হিন্দু শিক্ষকরা ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পাঠদান করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেও কোন সমাধান মেলেনি।

    বিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এরমধ্যে কর্মরত আছে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন। তাঁরা তিনজনই হিন্দু। বর্তমানে ১০৯ জন শিক্ষার্থী পড়া লেখা করছে। যার মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণিতে ১০৭ জন মুসলিম শিক্ষার্থী, বাকী দুইজন হিন্দু শিক্ষার্থী তারা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

    মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস চতুর্থ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষার বিষয়ে পড়াচ্ছেন। হঠাৎ করে প্রতিবেদককে দেখে টেবিলে বই রেখে তিনি অপ্রস্তুত হয়ে ওঠেন। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম ও ফাতেমা আক্তার জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষক না থাকায় প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস ইসলাম শিক্ষার বই পড়ান। তারা বলেন, স্যার আরবী পারে না। বাংলা দেখে পড়ে তাদেরকে লিখতে দেয়।

    পাশে তৃতীয় শ্রেণির কক্ষে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়, পুতুল রানী দাস নামে আরেক শিক্ষিকা ওই শ্রেণির ইসলাম ধর্মে বই পড়াচ্ছেন। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইয়াছিন আবদুল্লাহ জানায়, মাঝে মধ্যে পুতুল ম্যাডাম তাঁদের ইসলাম শিক্ষা পড়ান। অন্য সময় ইসলাম শিক্ষার বিষয় পড়ানো হয় না।

    শিক্ষক, স্থানীয় লোকজন ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চর সাহাভিকারী গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী আলহাজ্ব সোলাইমান ভূঞা ওই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০০৫ সালে ৩৩ শতক জমি দান করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করেন। ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষকরা সরকারি বেতন ভাতা পেতে থাকেন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় পাঁচকক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন। ওই বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন ৩জন শিক্ষক। তারা হলেন প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস, সহকারি শিক্ষিকা লিমা রানী মজুমদার ও পুতুল রানী দাস। বর্তমানে প্রথম শ্রেনি থেকে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত ১০৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। তম্মধ্যে মাত্র ২জন শিক্ষার্থী রয়েছেন হিন্দু। বাকী সব শিক্ষার্থীরাই হচ্ছে মুসলমান।

    প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস বলেন, বিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষক না থাকায় তিনি নিজে দুটি শ্রেণিতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। কয়েকদিন পরে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সব শ্রেণির ইসলাম শিক্ষার বিষয়ের কাগজ কাটা নিয়েও তিনি চিন্তিত রয়েছেন।

    তিনি বলেন, বিদ্যালয়টিতে ওয়াহিদ উল্যাহ নামে একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি উচ্চ শিক্ষার প্রশিক্ষণে চলে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন শিক্ষক পদায়ন হলে হয়তোবা এই সমস্যা কেটে যাবে। তবে মুসলমান শিক্ষক পদায়নের ব্যাপারে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান।

    বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাহাব উদ্দিন ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত তিনজন শিক্ষকই হিন্দু হওয়ায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পাঠদানের কোন শিক্ষক নেই। এনিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনতি বিলম্বে ওই বিদ্যালয়ে একজন মুসলমান প্রধান শিক্ষক পদায়ণ করে হলেও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান।

    বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব সোলাইমান ভূঞা বলেন, আধুনিক ও বিজ্ঞান মনস্ক শিক্ষায় গ্রামের মানুষদের শিক্ষিত করে তুলতে বড় আশা করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সরকারিভাবে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করণ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানের জাতীয়করণ করা হয়নি। দীর্ঘ ৬ মাসেরও অধিক সময় সব হিন্দু শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। অনতি বিলম্বে তিনি মুসলমান শিক্ষক পদায়নের দাবি জানান।

    সোনাগাজী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ওয়াহিদুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আগামী ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন মুসলমান শিক্ষক পদায়ন করা হবে। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও জানানো হয়েছে।

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090