ফেনীতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার বাড়ছে। আজ সোমবার পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়েছেন ৯শ ১৪ জন। যা মোট আক্রান্তের ৬৮ শতাংশের বেশি। জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ৩শ ৬ জন হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, রোগীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, সার্বক্ষণিক ফলোআপ করা, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের জটিল কোনো উপসর্গ না থাকা ও তুলনামূলকভাবে এ জেলায় বয়স্ক ও শিশুরা কম আক্রান্ত হওয়ায় করোনা রোগীরা দ্রুত সেরে উঠছেন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,
গত ১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মধুগ্রামে প্রথম এক যুবক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন। এক মাসের ব্যবধানে ১৬ মে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়ায়। তখন সুস্থতার হার ছিল ১৫ শতাংশ। ১৬ জুন জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬৩। সেই সময় সুস্থতার হার ছিল ২১ শতাংশের বেশি। ১৬ জুলাই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৩। সেদিন সুস্থতার হার ছিল ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ। ১ আগস্ট ঈদুল আযহার দিন পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৩শ ৪০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে আজ সোমবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯শ ১৪ জন। সুস্থতার হার ৬৮ দশমিক ২১ শতাংশ। আজ সদরে সর্বাধিক সুস্থ হয়েছে ১শ ৩ জন। এছাড়া দাগনভূঞায় ২, সোনাগাজীতে ৩ ও ছাগলনাইয়ায় ৩ জন সুস্থ হন।
সদর উপজেলায় মারা গেছেন ৮ জন। পরশুরাম উপজেলায় ১শ ৮ জন আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ৫৫ জন। মারা গেছেন ৩ জন। ফুলগাজী উপজেলায় ৮৮ জন আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫৬ জন। ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১শ ৫৫ জন আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ১শ ২৬ জন। মারা গেছেন ৪ জন। সোনাগাজী উপজেলায় ২শ ৪ জন আক্রান্ত হয়ে ১শ ৭১ জন সুস্থ হন। মারা গেছেন ১০ জন। দাগনভুঞা উপজেলায় ২শ ৭৭ জন আক্রান্ত হয়ে ২শ ১০ জন সুস্থ হন। মারা গেছেন ৬ জন।
সুস্থ হয়ে ওঠা একাধিক রোগী ও চিকিৎসক জানান, করোনায় আক্রান্ত হলে কোনো ধরনের ভয় বা গুজবে কান না দিয়ে মনোবল দৃঢ় করতে হবে। জটিল কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করলে বাড়িতে থেকেই কোভিড-১৯ রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন জানান, করোনায় আক্রান্তদের সুস্থ হওয়া স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে। বেশিরভাগ রোগী শুরু থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করায় সুস্থতার হার বেড়েছে। এখানে অধিকাংশ রোগীর লক্ষণগুলো মৃদু হওয়ায় তারা বাড়িতে থেকে দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র আরো জানায়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ২৫ জনকে ঢাকাসহ অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৬৪ জন রোগী ফেনী জেনারেল হাসপাতাল, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্স ও পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় ৬ হাজার ৯শ ৭৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। ৬ হাজার ৮শ ৫২ জনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
সূত্র আরও জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ১৩৫ জন রোগী টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় ৩৮ হাজার ৯১০ জন রোগী টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহন করেছেন।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি