আজ

  • শনিবার
  • ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাগনভূঞায় প্রবাসীকে বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

  • নিজস্ব প্রতিনিধি
  • ফেনীর দাগনভূঞার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের সেকান্তরপুর গ্রামের আলাউদ্দিন (৩৯) নামে এক সৌদি প্রবাসীকে বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে তার বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন ও ছোট ভাই সাহাব উদ্দিন (৩৮), তার স্ত্রী রুমা আক্তারের (৪৫) বিরুদ্ধে। সোমবার (১ আগস্ট) এ ব্যাপারে ফেনীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রবাসী আলাউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা। আলাউদ্দিন ওই গ্রামের সুলতান আহাম্মদের ছেলে। লিখিত বক্তব্যে সৌদি প্রবাসী আলাউদ্দিন বলেন, আমার আপন ছোট ভাই সৌদি ফেরত পলাতক আসামি ইয়াবা ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন (৩৮) ও তার স্ত্রী ফেনীর চিহ্নিত প্রতারক, সুদী কারবারী, নারী নির্যাতন ও চেক প্রতারণার মামলাসহ ডজন খানেক মামলার আসামী রুমা আক্তার (৪৫)। তাদের আত্যচারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে। দীর্ঘদির পর দেশে ফিরে বাড়ি ঢুকতে না পেরে বর্তমানে আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছি। নিজের অর্থে তৈরী করা বাড়ি ফিরে পেতে আদালত, থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু কারো কোন প্রকার সহযোগিতা পাইনি।

    লিখিত বক্তব্যে আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত সৌদি আরবে বসবাস আপন ছোট ভাই সৌদি ফেরত পলাতক আসামি ইয়াবা করছি। আমার আপন ছোট ভাই সাহাব উদ্দিন দীর্ঘ ১৭ ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন (৩৮) ও তার স্ত্রী ফেনীর চিহ্নিত বছর একটানা সৌদি আরবে থাকাকালীন গাড়ি চুরি, লোন এবং মানুষের টাকা আত্মসাৎ করার কারনে সৌদি আরবে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার হওয়ায় সে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা করে আসছে। চলতি বছরের ৩ জুলাই ফেনী সদরের কাজীরবাগ হতে ২০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশ তাকে হাতেনাতে আটক করে। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে।

    তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিগত ১২ বছর পূর্বে আমার গ্রামের বাড়িতে ফাউন্ডেশনসহ ৭ রুম বিশিস্ট একটি দালান ঘর নির্মান করি। আমার স্ত্রী কামরুন নাহার ওই ঘরে নিয়মিত বসবাস করছে। সে মাঝে মাঝে তার বাবার বাড়িতেও যেয়ে থাকে। ছোট ভাই ও মামলার আসামী সাহাব উদ্দিন সৌদি আরব থেকে মামলার কারনে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আমার ১২ বছর পূর্বে নির্মিত ঘর দখলের পায়তারা করতে থাকে। আমি ২০১৯ সালের ২০ জুন সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসে তিন মাস বাড়িতে অবস্থান করে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রবাসে ফিরে যাই। এরপর আমার ছোট ভাই ও তার স্ত্রী প্রতারক রুমা আমার এলাকার কিছু দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় অন্যায়ভাবে আমার নির্মিত ঘর দখল করে। আমার স্ত্রী কামরুন নাহার তাদেরকে বাধা প্রদান করলে আসামীরা লোকমারফত সামাজিকভাবে আমার স্ত্রীকে অপমান অপদস্থ করে। আমার স্ত্রী তার মায়ের অসুস্থতার কারণে বাবার বাড়িতে গেলে ওই বছরের (২০১৯) ৬ ডিসেম্বর ছোট ভাই সাহাব উদ্দিন (৩৮) ও তার স্ত্রী রুমা আক্তার (৪৫), আমার বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন (৫২) ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩৮) এবং আমার ভাতিজা (গিয়াস উদ্দিনের ছেলে) ফারুক (২৪) আমার ঘরের সদর দরজা ভেঙ্গে আমার ঘরে থাকা দুটি মালামালে পরিপূর্ণ লাগেজ, তিনটি ব্রিফকেস, ১১টি বিদেশী কম্বল, ৪০ ইঞ্চি সনিটিভি সহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল চুরি করাসহ আমার বসত ঘরের সকল জিনিসপত্র ভাংচুর এবং দামা দিয়ে কেটে দশ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। ওই হামলা ও লুটপাটের ঘটনার আমার স্ত্রী ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দাগনভূইয়া থানায় (জি আর মামলা নং-১৭৯/২০১৯, দন্ডবিধির 888/980/829/0৪ ধারা) মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামী আত্মসমর্পণ করার সময় চুরির বিষয় স্বীকার করে চেয়ারম্যান থেকে অনুমতি নিয়েছে মর্মে জানালে আদালত কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেয়। ওই ঘটনার পর সকল আসামীদের সহযোগীতায় আসামী সাহাব উদ্দিন জামিনে যেয়ে ২০২০ সালের ১৩ মে আমার স্ত্রীকে মারধর ও হত্যার চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় আমার স্ত্রী দাগনভূইয়া থানায় আরও একটি মামলা (জি আর মামলা নং ৭৭/২০২০) দায়ের করে। ওই মামলার পর আসামীরা পুনরায় আমার ঘর দখলের চেষ্টা করলে আমার স্ত্রী ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (ফৌজদারী কার্য্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারা মোতাবেক মিস মামলা নং-১৫০/২০২০) মামলা দায়ের করে । বিচারক আমার ঘর এর উপর স্থিতিবস্থার আদেশ প্রদান করেন। ওই তিনটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

    লিখিত বক্তব্যে প্রবাসী আলাউদ্দিন আরও বলেন, আসামীদের এহেন কাজ কর্মে আমি চলতি বছরের ২২ জুলাই সকালে সৌদি আরব থেকে আমার বাড়িতে আসি। এর প্রায় এক ঘন্টা পর আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী প্রতারক রুমা আক্তার কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে আমার বাড়িতে এসে জোর পূর্বক আমার ঘরে ঢুকে যায় এবং আমাকে হুমকি ধমকি দিয়ে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে আমাকে আমার ঘর হতে বের করে দেয়। বর্তমানে আমি দীর্ঘ ২৩ বছরের উপার্জন, ঘর, ফার্নিচার ও আমার সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

    লিখিত বক্তব্যে প্রবাসী আলাউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমার ভাই সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী মোসাম্মর রুমা আক্তার একজন প্রতারক শ্রেণির মহিলা। সে ইতোপূর্বে দুইটি বিয়ে করার পর আগের দুই সংসারের ৪টি ছেলে মেয়ে রেখে আমার ভাই সাহাব উদ্দিনকে বিয়ে করে। মোসাম্মর রুমা আক্তার একজন পতিতাদের সর্দার। ফেনীর অনেক মানুষের কাছে মেয়ে ভাড়া দিয়ে তাদের গোপন ভিডিওধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। রুমা আক্তার আর্থিকভাবে টানা পোড়েনের মাঝে থাকলেও অনেক মানুষের বিরুদ্ধে ৭০ লাখ টাকা, ৫০ লাখ টাকাসহ আরো অনেক বড় বড় অংকের চেকের মামলা করে বহু টাকা উদ্ধার করেছে। সাধারণ মানুষ লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছুই জানায় নাই বা অনেকেই মামলা মোকদ্দমা করে নাই । একাধিক মামলায় একাধিকবার সে গ্রেপ্তার হয়ে জেলখেটে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। মোসাম্মর রুমা আক্তারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ফেনীর প্রায় সকলপত্র পত্রিকায় প্রতারণার বিষয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমার বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন, তার স্ত্রী আলেয়া বেগম ও ভাতিজা ফারুক সকল অপকর্মের স্বাক্ষী এবং সহযোগিতাকারী।’

    আলাউদ্দিন বলেন, আমরা ৬ ভাই এবং ১ বোন। আমর অপরাপর ভাই ও বোনরা উপরোক্ত আসামীদের এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিকভাবে চেষ্টা করেও মামলা মোকদ্দমা করেও কোন প্রকার সুফল পাই নাই। তারা পরস্পর যোগসাজসে আমার দীর্ঘ ২৩ বছরের উপার্জন আত্মসাত করে আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে আমার থাকার কোন জায়গা নেই। আমি বিভিন্ন জায়গায় সুবিচার পাওয়ার প্রার্থনা আনয়ন করেও কোন প্রকার সুবিচার পাই নাই ।

    সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী আলাউদ্দিনের বড় ভাই নিজাম উদ্দিন, মুসা মিয়া, সায়দুল হক, প্রতিবেশী মোহাম্মদ আবদুল, মোহাম্মদ রায়হান, কাজল মিয়া, মো. আবদুর রউপ মিয়া, মো. ইরিয়াস মিয়া, মো. ইকবাল মিয়া, মোসাম্মৎ কামরুন নাহার, শাহিনা আক্তার, পারভিন আক্তারসহ পরিবারের স্বজন ও গ্রামবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।

    এ বিষয়ে দাগনভূঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম জানান, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ ব্যাপারে একে অপরকে হেনস্থা করতে দুই পক্ষই থানায় মামলা করেছে।

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090