ফেনীতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ভিপি শনিবার বিকেলে শহরের ফলেশ্বরস্থ তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন- গত ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিল করার পর থেকে তার বাড়ির চারপাশে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীর নির্দের্শে বিরিঞ্চির মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে আবুল কালামের নেতৃত্বে ৫নং ওয়ার্ডের জাহিদুল ইসলাম, আজম খান সজিব, আরাফাত, সাদ্দাম, ৬নং ওয়ার্ড ফলেশ্বর গ্রামের আবদুল হালিম, রফিকুল ইসলাম রুবেল, আবদুল করিম, আবদুল হালিম সুমন ও সোনাপুর গ্রামের গণি প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি ও গুলি ছোটে। এসময় ৮ থেকে ১০টি হোন্ডা করে প্রতিটি হোন্ডায় ৩ জন করে বাড়ির সামনে এসে প্রায় তিন শতাধিক সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মোটর সাইকেল মহড়া দিচ্ছে। ওই ক্যাডাররা শনিবার সকালে মোটর সাইকেল শো-ডাউন নিয়ে ভিপি জয়নালের বাড়ির সামনে এসে ফাঁকা গুলি ছোড়ে শ্লোগান দিয়ে বলতে থাকে ‘ভিপি জয়নাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার কর, বাড়ি ছাড় নইলে তোকে মেরে ফেলা হবে’।
লিখিত বক্তব্যে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, শনিবার সকাল ৮টার দিকে ফলেশ্বরস্থ বাড়ির প্রধান প্রবেশপথ, সদর উপজেলা কার্যালয়ের মোড়, বাড়ির পশ্চিম উত্তর পাশ্বে ফেনী বিলোনীয়া রেল লাইন, সদর হাসপাতাল মোড়, পেট্টোল পাম্প, ফেনী পলিটেকনিকেল, বিএড কলেজ মোড়, পুরাতন রাণীর হাট এবং বাড়ির পূর্বপাশ্বে ফলেশ্বর পরশুরাম সড়কের সংযোগমুখে প্রায় ৩ শতাধিকেরও বেশী সশস্ত্র অবস্থান করে। এদের অনেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, দামা, কিরিচ, হাত বোমা, চাপাতি, রড, লাঠিসোটা রয়েছে। অবস্থানের পর থেকে তারা চেনা অচেনা অনেক মানুষকে শারিরীকভাবে আঘাত করে। এদের মাধ্যে কাজীরবাগ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সামছু মিয়া, ফরহাদ নগরের সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বাচ্চু, শশর্দী ইউনিয়নের তারেক ইকবাল মনি, ইয়াছিন, শাহাদাত এবং ফতেহপুরের বৃদ্ধ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। এছাড়াও রাস্তায় চলাচলকারী নিরীহ বহু মানুষকে নির্যাতন করে তাদের পকেটের টাকা, হাতঘড়ি, মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এভাবে স্বসস্ত্র ক্যাডাররা পাহারা বসিয়ে ভিপি জয়নাল ও তার পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলে তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাজনীতিবিদ, ফেনী সদর আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলাম। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। আসন্ন নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে আমাকে সদর আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন বলেন তিনি জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও ভিপি জয়নালের ছেলে রাশেদ ইকবাল।
নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি চেয়ে পুলিশ সুপার ও ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসককে জানালে তারা মৌখিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এখনো ক্যাডারা সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করছে। ভিপি জয়নাল জীবন, মালের নিরাপত্তা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেন।
তিনি সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া ও অবরুদ্ধ করার বিষয়টি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীকে অবহিত করলে তিনি নিজেই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না আশ্বাস দেয়ার পর এই নৈরাজ্যের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায় বলে ভিপি জয়নাল অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কোন নেতাকর্মী অনুপুস্থিত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভিপি জয়নাল বলেন, সরকার দলীয় ক্যাডারদের মহড়ায় জীবন ঝুঁকি থাকায় তাদের আসতে বারণ করেছি। তিনি আরো জানান, প্রয়োজনে জীবন দেবো তারপরও গনতন্ত্র রক্ষায় এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো না।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, বিএনপির প্রার্থী তার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন তবে তিনি অবরুদ্ধ রয়েছেন এধরণের কোন অভিযোগ করেন নি। এছাড়া ওই এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশের দুটি টহল দল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
সম্পাদনা : এএএম/এসজে